Tuesday, April 3, 2012

একজন মনার বেঁচে থাকা (by Delara Hossain): ২য় পর্ব

ইউনিভার্সিটিতে চান্স পেলো মনা। প্রথম সেমেস্টারে আইনের বিষয়, অনেক ভয় হচ্ছিলো তার। ইউনিভার্সিটিতে সবাই ভীষণ স্মার্ট। মনার নিজেকে অনেক অসহায় মনে হচ্ছিলো। প্রথম সেমেস্টারের সময় শেষ হলো, রেজাল্ট দেওয়া হলো। ল কোর্স মনা হাইয়েস্ট মার্কস পেয়েছিলো। এই হাইয়েস্ট মার্কস তার কনফিডেন্স বাড়িয়ে দিয়েছিলো অনেকখানি। আইন পড়তে আর কোনো বাধা তাকে বাঁধ মানাতে পারেনি। ডিপার্টমেন্টে অনেক যুদ্ধ করে নিজের অবস্থান তুলে ধরেছিলো। সে প্রমাণ করেছিলো, সে হলিক্রসের ছাএী ছিলো, যা সে করতে কলেজে থেকে পারেনি। ইউনির্ভার্সিটিতে টিচাররা স্টুডেন্টদের কাছ থেকে আশা করে একজন স্টুডেন্ট যেকোনো বিষয়ে টিচারের কাছে যাবে। মনা সেটা করতে পারত না। আর তাই প্রায় কোর্সে খানিকটা ডিসক্রিমিনেশনের শিকার হতো।

সময় পেরিয়ে যাচ্ছিলো, কিন্তু মনার বাবার এবার শুরু হরো সন্দেহবাতিক। মনা আসলেই পড়ছে নাকি আবার প্রেম করছে, এই নিয়ে প্রায় দিনই মনাকে শুনতে হতো নানান কথা। মনার মা আবার খুব ভালোভাবে তার স্বামীকে সাপোর্ট করতো ।

ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় সারাটাক্ষণ তার মন খারাপ থাকত। তার মন চাইত এমন একজন মানুষ যে সব জেনে গ্রহণ করবে তাকে। এক দুবার ভালোলাগার বিষয়টা যেন পক্কতা পায় সেজন্য কথাও বলেছে কিন্তু দিনশেষে কেউ থাকেনি। যদিও সে তার মনের আসল কথা বলার মতো এমন কাউকে পায়নি। মনা ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস, লাইব্রেরি এসব করতে করতে বেশ বোর হয়ে উঠেছিলো, তাই হঠাৎ ভাবলো কোনো একটা এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজ করা দরকার, আর তাই শখের বশে যোগ দিলো নাটকের ক্লাবে। নাটকের রির্হাসেল তার ভীষণ ভালো লাগত। কিন্তু মনার বাবার ধারণা মনা ছেলেদের সাথে মিশে নষ্ট হয়ে যাবে, কিংবা প্রেম করছে। তারপরও মনা নাটক করল, খুব প্রশংসা পেল নাটকটা। নাটকদলের শাশ্বত ভালোবাসত অনুকে, কিন্তু তাদের মধ্যে চলছিলো নানা সমস্যা যেটা কমবেশি নাটকের সবাই জানত। মনার সাথে ওদের বন্ধুত্ব ছিলো খুব ভালো। নাটক করার সময় মনা কেবল ওদের চারজনের সাথে চলত। দিনটি ছিলো পহেলা ফাল্গুন। মনা বসে ছিলো একা। ক্লাস শেষ করে মন খারাপ করে বসে ছিলো মনা। হঠাৎ করে দেখা শাশ্বতের সাথে। একটা কাজে ডেইলী স্টার যাবে, মনাকে বলাতে সেও গেল। সেদিন কথা হতে হতে শাশ্বত তাদের (শাশ্বত ও অনু) সম্পর্কের কথা আলাপ করল। মনা তাকে বুঝিয়ে বলল কিভাবে এই সর্ম্পক ঠিক করা যায় কিন্তু শেষে গিয়ে শাশ্বত সব ভুলে গেল। মনার দেখানো পথে সে মনাকেই ভালোবাসতে চাইলো। মনারও ভালো লাগত শাশ্বতকে। কিন্তু ধর্মের ব্যবধানের কী হবে? শেষ পর্যন্ত শাশ্বত আর কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করল মনাকে। শাশ্বত মুসলমান হয়েছিলো নিজের ইচ্ছায়। মনা খুশি হয়েছিলো, কিন্তু মনার বাবা কী করবে? মনা শাশ্বতকে নিজের সব কথা বলেছিলো, তাতে তার কোনো সমস্যা ছিলো না , বুকে আগলে নিলো মনাকে শাশ্বত।

শাশ্বত খুব অন্য রকমের একজন ছেলে। তার জীবনে কাছে কালচার সবচেয়ে প্রিয়। ও ভীষণ সৎ কিন্তু সিরিয়াস না। মনাকে বিয়ে যখন করল ওর লাস্ট সেমেস্টার ছিলো। মনা ভেবেছিলো ও হয়তো চাকরি খুঁজবে কিন্তু ও যেহেতু সিরিয়াস না তাই মনা ওকে সাহায্য করেছিলো। শাশ্বত আর মনার বিয়ের কাহিনি নিয়ে আর একটা গল্প লেখা যাবে, সেটা আর একদিন শেয়ার করা যাবে। শাশ্বতের বাসায় ওদের বিয়ের কথা জানিয়েছিলো মনার বাবা। মনার বাবা কীভাবে জেনেছিলো তাদের বিয়ের কথা, তা এখনও মনার কাছে অজানা। শাশ্বতর বাসায় খুব খারাপ কিছু প্ল্যান করছিলো ওর বাবা মা তাই রাতের অন্ধকারে শাশ্বত চলে এসেছিলো মনার বাসায়। মনার বাবা, প্রথমে ডিভোর্স করিয়ে দিতে চেয়েছিলো। শাশ্বত যখন বাসায় এসেছিলো ওদেরকে আলাদা থাকতে হতো মনারই বাসায়। একসাথে ওদের ঘুমাতে দিত না যদি বাচ্চা হয় তাই। তখনও শাশ্বতের কোনো চাকরি নাই, মুক্তি মেলার কোনো পথ নাই মনার। মনা অনেকবার বলেছে শাশ্বতকে, মনার বাবাকে যে সে এই বাসায় থাকবে না। যেহেতু শাশ্বতের কোনো চাকরি নাই আর মনার পড়া শেষ হয় নাই তাই মনারও বাসা আর ছাড়া হলোনা। এদিকে প্রতিদিন শাশ্বত অপমানিত হয়, খারাপ লাগে মনার কিন্তু শাশ্বত খুব একটা বোঝে না এসব। শাশ্বতর বাবা মা ওদের বিয়ে মেনে নেয়নি, বরং মেরে ফেলতে চেয়েছিলো ওকে, ইউনিভার্সিটি থেকে তুলে নিয়ে আসতে চেয়েছিলো মনাকে। তাই ওরা দুজন মনার বাসাকে নিরাপদ ভাবত। মনার বাবা শাশ্বতকে এমবিএ পড়ার জন্য টাকা দিলেন। মনার বাবা হয়ত চেয়েছিলো মনার জীবনের ক্ষতিটা পূরণ করতে। কিন্তু খুশি না মনার মা, তার জীবনে টাকা অনেক বড়, তাইতো সে প্রতিনিয়ত অপমান করত ওদেরকে।

মনার অনুরোধে শাশ্বত একটা চাকরি পায়। বেতন খুব বেশি না, তবুও মনা আর শাশ্বত খুশি। বেকারত্ব ঘুচলো শাশ্বতর। প্রতিদিন শাশ্বতর অপমানিত হওয়া নিয়ে মনা যখন শাশ্বতকে বোঝাতে যেত ওদের মধ্যে ঝগড়া হতো রাতের পর রাত,কখন কখনও মার খেত মনা। তারপরও ভরসা ছিলো মনার শাশ্বতর প্রতি। মনা নিজের মায়ের বাসায় প্রতি মাসে খাওয়া খরচের টাকা দিত, যেন তার মা তার স্বামীকে অপমান না করে। শাশ্বত এই চাকরিটা পাওয়ার আগে আর দুটা চাকরি পেয়েছিলো মনার সাহা্য্যে, কিন্তু কোথাও বছরখানেক কাজ করতে পারে নাই, যদিও বিয়ের আগে তার টানা চার বছরেরে অভিজ্ঞতা ছিলো। শাশ্বত খুব সিরিয়াস না, এসব নিয়ে একবার ঝগড়া করে মনা মার খেল। শাশ্বতর চড়ের কারণে আজ মনার বাম কানের পর্দায় ছিদ্র। তবুও মনা সব মেনে নেয়। চাকরি পাওয়ার পর মনা চাইত ওর প্রতিদিনের খরচ শাশ্বতর টাকায় হবে, আর তাই করল মনা। এই নিয়ে ও ভীষণ রাগ মনার মায়ের কেন এত কিছু করে মনা, তাই মনার মা শাশ্বতকে জুতা দিয়ে মারতে চাইলো। এভাবে দেখতে দেখতে কেটে গেল আড়াই বছর। মনা পাশ করল, আইন পেশায় থাকবে বলে প্র্যাকটিসে গেল। খুব কষ্ট কিন্তু টাকা নাই। ভীষণ মন খারাপ মনার। সে আর তার বাবা মায়ের বাসায় থাকবে না। কিন্তু সাহস করে না শাশ্বত। শাশ্বত দায়িত্ব নিতে অনেক ভয় পায়।

একদিন বাসায় প্রচণ্ড ঝগড়া হলো মনার মায়ের সাথে মনার আর শাশ্বতর। তারপর মনা রাগ করে বাসা ছেড়ে বেরিয়ে গেল। মনার মা খুব খুশি, কিন্তু মেয়ের এই অসহায়ত্ব বোধ হয় মনার বাবার কারণে এটা সে বুঝতে পেরেছিলো। তাই সে অনেক চেষ্টা করত ওদেরকে আর্থিকভাবে সাহায্য করতে। ছোট একটা ছাদের ঘর, মনা লেখাপড়া জানা একজন মেয়ে হয়েও কিছুই করতে পারছিলো না । মনা শাশ্বতকে খুব ভালোবাসে। মনার ওই সমস্যাগুলোর জন্য সে শারীরিকভাবে শাশ্বতের কাছে যেতে পারত না। শাশ্বত এ নিয়ে কিছু বলত না কারণ শাশ্বতেরও কিছু সমস্যা ছিলো। অনেক কষ্টে চলছিলো তাদের জীবন। বিধাতা হঠাৎ মুখ ফিরে চাইলো। অনেক বড় একটা জায়গায় চাকরি পেলো শাশ্বত। মনাই বলেছিলো অ্যাপ্লাই করতে। তাদের সব কষ্ট দূর হয়ে যাবে ভেবেছিলো মনা নতুন বাসা, নিজের গোছানো সংসার এসব দেখে। মনা মাস্টার্সে ভর্তি হলো। সে ওখানে রেজাল্ট ভালো করায় টিচিং অ্যাসিস্টেন্টের কাজ পেলো। খুব একটা ব্যস্ত থাকতে হয় না মনাকে। তাই মনা ভাবছিলো এবার সন্তান হলে ভালো হয়, বিয়ের চার বছর হয়ে গিয়েছে যেহেতেু। মনার নতুন সংসার দেখে তার বাবা মায়ের আদর আর শেষ হচ্ছিলো না। মনাও তাদের থেকে দূরে থাকতে পারল না শুধু ছোট বোনের কথা ভেবে। মনার এই ভুল তার জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়ালো। এদিকে শাশ্বত চাকরি, পড়াশনা, বাসার দায়িত্ব নিয়ে হিমশিম খাচ্ছিলো, সময় দিচ্ছিলো না মনাকে। মনা প্রায় একা একা থাকত, কাঁদত, মানসিকভাবে খুব পাগল হয়ে উঠেছিলো। অনেক ঝগড়া করত, খুব রাগ দেখাত,তারপর অনেক কাঁদত। এরপর চুপ। কিছু মনে নেই তার।

শাশ্বতর পড়তে ভালো লাগে না, ও শুধু চায় বিলাসিতার পরিশ্রমবিহীন জীবন। মনার মনের কষ্ট অনেক বাড়তে থাকে, তাই তাবিজ নিলো, কবিরাজি ঔষধ খেলো যেন তার সন্তান হয়। মনার সমস্য ছিলো, গত চার বছর ধরে বার্থ কনট্রোলের জন্য কিছু করত না শুধু তারিখ মেনে চলত। তাছাড়া মনার অনেক মাইগ্রেনের ব্যথা ছিলো। সব মিলিয়ে মা হওয়া একরকম কঠিন ছিলো তার জন্য। এগুলো শাশ্বত ও বুঝত না। শাশ্বত মনাকে ভালোবাসে, কিন্তু তার দৃষ্টিতে মনা অনেক অ্যাম্বিশাস, কেননা মনা অনেক পড়তে চায়। মনাকে সে রুড আর ডমিনেটিং মনে করে। আসলে মনা অনেক নিয়মমাফিক চলতে পছন্দ করে। হলিক্রসে শিখেছিলো এসব সে। এর মধ্যে মনার ও একটা ভালো চাকরি হলো। চাকরি পাওয়ার পর পর বিধাতা মনার মনের আশা পূরণ করল। মনা মা হতে চলল। মনা অনেক খুশি। মনা আর শাশ্বত চাকরি পেয়ে মনার বাসার জন্য অনেক টাকা খরচ করত। প্রত্যেকের জন্মদিনে দামি উপহার, ঈদে দামি দামি জিনিস, শুধুমাত্র মনার আর মনার স্বামীর অবস্থানকে উন্নত করার জন্য। মনার বাবা খুব লজ্জা পায়, মুখ ফুটে কিছু বলে না। তাই সে সিদ্ধান্ত নিলো মনা আর শাশ্বতকে বিদেশ পাঠিয়ে দেবে। মনা আসলে ওর পরিবরের মানুষের জন্য করে বোঝাতে চেয়েছিলো কিন্তু সেটাকে ওরা এখন ও ভাবে মনার দুর্বলতা। মনার মা আবার মনার বাবার এই পরিবর্তনে খুব বিরক্ত। শুধু তাই নয়, মনার বাবা মনাকে আর তার স্বামীকে আবার বাসায় নিয়ে আসলো। মনার ও উপায় ছিলো না। ও তখন পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। একজন লোক নেই ওকে সাহায্য করার। সকালে না খেয়ে অফিস যায়, সারাদিন খারাপ লাগে। বোঝার কেউ নেই। দুপুরে দোকানের মসলাদার খাবার। তবুও একদিনের জন্য মনার মা তার জন্য খাবার করে দেননি। ডাক্তার মানা করা সত্ত্বেও মনা চাকরিটা করত। বড় হাসপাতালে বাচ্চা জন্ম দিতে অনেক টাকা লাগে। আর মনা এবার তার সন্তানের জন্য কারো কাছে ছোট হবে না। বাবার বাসায় এবার মনা অনেকগুলো টাকা দিয়ে থাকত, তাই মনার মায়ের খুব একটা যন্ত্রনা ছিলো না।

মনার সেই দশ মাসের কথা অনেক কষ্টের, ওর খুব বাসার খাবার খেতে ইচ্ছা হতো। বিছানায় ঘুমাতে ইচ্ছা হতো। বিয়ের পর সে তার মায়ের বাসায় কোনদিনও বিছানায় ঘুমায়নি। মনা যেখানে কাজ করত সেখানে মনাকে পেইড ম্যাটার্নিটি লিভ দেবে না। মনার চিন্তা বেড়ে গেল। এদিকে শাশ্বতর প্রজেক্টও শেষ হয়ে আসছে। তার উপর আবার শাশ্বত এমবিএতে মিনিমাম রেজাল্ট রাখতে না পারায় ওই ইউনিভার্সিটি ছাড়তে হবে। চিন্তায় শুধু কাঁদে মনা, আর দোয়া করে বিধাতার কাছে। মনা কয়েকটা নতুন চাকরিতে অ্যাপ্লাই করল। শাশ্বতকেও বললো। কিন্তু ওর তখন বিশ্রাম চাই, আর পরিশ্রম করতে পারছে না। মনা ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাক পেল। শাশ্বত যেতে দিলো না শরীরের কথা ভেবে। আর আশা দিলো ও সব ম্যানেজ করে নেবে। শাশ্বত অন্য ইউনিভার্সিটিতে ক্রেডিট ট্রান্সফার করল। এমবিএ শেষ না বলে জবে অ্যাপ্লাই করলেও কোথাও থেকে ডাক পেত না। শেষ পর্যন্ত অনেক কষ্ট করে বাচ্চাটা হলো। বাচ্চা হওয়ার দু মাসের মাথায় বাচ্চার বাবার চাকরি নেই। তাই মনা ওই শরীর নিয়ে নতুন চাকরি খুঁজলো এবং পেল। সন্তান আন্ডার ওয়েইট। বুকের দুধের অনেক প্রয়োজন। বুকের দুধ গড়িয়ে পড়ে, কিন্তু মনার সন্তান পেত না। মনাকে নতুন চাকরিতে ফিল্ড ট্রিপ করতে হতো। শাশ্বত এখন সারাদিন বাসায় থাকে। মনা বাসায় থাকে না বলে সারাদিন টিভি দেখার অফুরন্ত সুযোগ। বাচ্চাটা থাকে মনার মায়ের বাসায়, সারাদিন পর বাচ্চাকে নিয়ে আসে অফিস থেকে আসার পথে। তারপর এই শরীর নিয়ে সন্ধ্যায় রান্না করা,ঘরের কাজ.....
দেখতে দেখতে বাচ্চার বয়স এক বছর হয়ে গেছে, এখনও অবধি কোনো চাকরি নাই শাশ্বতর। মাস্টার্সটা শেষ করছে অনেক কষ্টে। জবে অ্যাপ্লাই করে কিন্তু ইন্টারভিউ হলে ঠিকমতো পড়াশনা করে না, সেটাও পড়িয়ে দিতে হয় মনাকে। এনজিওতে বেতন বেশি, তাই ওখানে কাজ করতে চায় অথচ পড়েছে এমবিএ। এনজিওতে যে কাজ করতে হবে সেটাও মনার আইডিয়া। শাশ্বত শুধু চায় গান করবে, নাটক করবে। এটাই তার জীবন।
মনা মাস্টার্সে হাইয়েস্ট ডিস্টিংকশন পেয়েছে এত কাজের মাঝেও। এবার ভাবছে হাইয়ার স্টাডিজের কথা। এ কাজেও একবিন্দু সাহায্য করেনি শাশ্বত। অফিসের ফাঁকে ফাঁকে সময় বের করে কাজগুলো শেষ করল। আমেরিকার একটা ইউনির্ভাসিটি থেকে ইমেইলে জানল মনাকে আই-২০ দেওয়া হবে, তাই মনার বাবা বললো বাসাটা ছেড়ে মনার বাবার বাসায় যেতে। মনা দেখল এ কাজটা করলে কিছু টাকা জমবে। এদিকে আবার মনা তার ছোট বোনের বিয়ে ঠিক করার কাজ করছিলো। খুব ভালো একটা পরিবার। মনা তার স্বামী, সন্তান নিয়ে মনার বাবা মায়ের বাসায়। কয়েকদিনের মধ্যে বোনের বিয়ে হয়ে যাবে।
দিনটি ছিলো, ২৬শে নভেম্বর ২০১১। মনা অনেক খুশি। বোনের বিয়ে ফাইনাল। দুপুর তিনটায় ফোন করে ছেলে জানালো মনার বোনকে বিয়ে করা সম্ভব না, কারণ "he is not physically attracted to her"।
২৮ তারিখ মনার I-20’র হার্ড কপি বাসায় এলো। সবাই জানলো , কিন্তু বোনের এই ঘটনার জন্য সে যাবে না।

আজ প্রায় চার মাস। মনা পড়তে যাবে বলে অফিসকেও নোটিশ করেছিলো তাই আজ তারও চাকরি নাই। মনার বিয়ের পাঁচ বছর শেষ হবে আর কিছুদিন পরে, কিন্তু বিধাতা এতই নির্মম যে মনাকে সে ফিরিয়ে দিয়েছে সেই পিছনের কষ্ট। মনা, শাশ্বত এখনও বেকার, ওদের সন্তানের করচ চারানোর টাকা ও তাদের নেই। জমানো সব টাকা খরচ হয়ে গেছে। এতকিছুর পরও শাশ্বত সিরিয়াস না।
মনা এখন আর শাশ্বতকে ভালোবাসে না । মনাকে সে বুঝল না। কিছুই করতে পারে না সে মনার আর তার সন্তানের জন্য। এখনও মনার মা অপমানিত করে। নতুন করে যোগ হয়েছে মনার সন্তান। মনার বাবা প্রমিজ করেছে মনাকে সে কিছু টাকা দেবে পড়ার জন্য। মনা এবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে শাশ্বতর সাথে থাকবে না। মনা নতুন একটা চাকরি পেলে তার সন্তানকে নিয়ে এ বাসা ছেড়ে সবাইকে ছেড়ে চলে যাবে। মনা ডিভোর্স চেয়েছে। মনা মানসিকভাবে অসুস্থ। সেই অসুস্থতা তাকে শারীরিকভাবে অসুস্থ করে তুলছে। শাশ্বতও মেনে নিয়েছে। বলেছে নতুন চাকরি পেলে ডিভোর্স দিয়ে দেবে। যে স্বামী কারো দায়িত্ব নিতে পারে না তার সাথে থাকা অসম্ভব।

Dear Readers please do suggest Mona, whether is it right decision or not.


দু'মাস পর...
মনা বিদেশে পড়তে যাওয়ার জন্য সুযোগ পেয়েছে, মনার বাবা তাকে ফাইনান্সিয়ালি সাহায্য করছে। কিন্তু অল্প কিছু টাকার জন্য হচ্ছে না। শাশ্বত, মনা ওরা দুজনে ওদের সেভিংসও দিয়েছে, তবুও হচ্ছে না। য়াত্মীয়, বন্ধু সবার কাছে সাহায্য চেয়েছে, কেউ দিলো না। সবার নানা রকম সমস্যা। মনার প্রয়োজন ৩ লক্ষ টাকা, তাহলে মনা তার স্বামী, সন্তান, নিয়ে একসাথে যেতে পারবে। মনা কিন্তু সবার কাছে একসাথে এত টাকা চায়নি।

শাশ্বত আপ্রাণ চেষ্টা করে ও কারো কাছে ধার পাচ্ছে না। মনার এত দিনের স্বপ্ন তবে কি ভেংঙে যাবে?
না, শাশ্বত তা হতে দিচ্ছে না। মনা পড়বে, অনেক বড় হবে, মনা-ও তো ওর জন্য কম করেনি।   তাই, যেই শাশ্বতর ঘর মনা একবার ছেড়ে চলে যেতে চেয়েছিল, সেই শাশ্বত মনার জন্য কিডনি ডোনেট করে ৫ লক্ষ টাকা যোগাড় করে দিচ্ছে। শাশ্বতর অপারেশন আগামী ১৫ তারিখ।

আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ। আপনারা শাশ্বতকে ছাড়তে মানা করার কারণে মনা তাকে একটা সুযোগ দিয়েছিল। আর আজ সুযোগ পেয়ে, শাশ্বত আবার নিজের ভালোবাসাকে প্রমাণ করল।
শাশ্বত বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে যাবে, যাদের কে কিডনি ডোনেট করবে তাদের সাথে। আপনারা ওর জন্য দোয়া করবেন যেনো সে সুস্থ হয়ে ফিরে আসে তার প্রিয় মনা এবং তার সন্তানের কাছে।

লেখক:
দিলারা হোসেইন


No comments: