Saturday, April 7, 2012

মিতুলের সংসার

You never know how strong you are until being strong is the only option for you...


মাস ছয়েক আগের কথা। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছিলো মিতুলের। বিনানোটিশে তালাকনামা এলো শ্বশুরপক্ষ থেকে। ওর সব গয়নাগাটি, জিনিসপত্র আত্মসাৎ করে রেখে দিলো ওরা। এক কাপড়ে বেরিয়ে এসেছিলো মিতুল। বাবা মারা গেছিলেন ওর বিয়ের পরপরই। মিতুল বাবা-মা’র একমাত্র সন্তান।  পারিবারিকভাবেই পরিচয় হয়েছিলো ভালোবাসার মানুষটার সাথে। তারপর প্রেম, বিয়ে। যে মানুষটাকে দুটা বছর পাগলের মতো ভালোবেসেছিলো সে কী করে পারল এমনটা করতে? তাও কিনা যৌতুকের জন্য!

বাবা চলে যাওয়ার পরে মা থাকতেন নানীর বাসায়। দুবছরের সংসার ছেড়ে মিতুল গিয়ে উঠল সেখানে।

কী অসহায় একেকটা দিন! নতুন জব। ঘণ্টা মেপে টাকা পায়। তখনো ট্রেইনি। ঠিক মানিয়ে নিতে পারছিলো না। হাতেগোনা কিছু টাকা নিয়ে বাসায় ফিরত। নানা-নানী না থাকলে নানীবাড়ির আদরও থাকে না। মামীর মুখ ভার। তাও দুমাস দাঁত কামড়ে ওখানে থেকে যায় মিতুল।

সবাই বলতে লাগল শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে লিগ্যাল কোনো অ্যাকশন কেন নিচ্ছে না। শ্বশুরপক্ষ জানিয়েছে ইদ্দতের ৯০ দিন পেরিয়ে গেলে ফার্নিচার আর অন্যান্য জিনিসপত্র দিয়ে দেবে। কিন্তু ততদিনে ওরা গয়না বিক্রি করে চারদিকে বলে বেড়াচ্ছে মিতুল নাকি নিজের গয়না সরিয়ে ফেলেছে। রাগে গা জ্বলে যায়! ওর কাছে কোনো প্রমাণও নেই যে ও শাশুড়ির কাছে গয়না রেখেছিলো। সবাই তেড়ে আসে... “শাশুড়ির কাছে কেউ গয়না রাখে?”... মিতুল ভাবে, “অবিশ্বাস করে কি কেউ সংসার করে? উনারা হজ্জ করে এসে এহেন নীচ কাজ করতে পারেন সে কি আমি জানতাম?”

সবদিক দিয়েই যখন তালমাতাল অবস্থা, মিতুল ভাবে- অতীত না ভবিষ্যৎ? তারপর সিদ্ধান্ত নেয় অতীতকে আঁকড়ে ধরে না থেকে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার। সব দাবিদাওয়া তুলে নিলো। শ্বশুরপক্ষকে দিয়ে দিলো সব। টাকাপয়সা, গয়নাগাটি নিয়ে জাহান্নামে যাক নোংরা মানুষগুলো। এই পশুদের হাত থেকে বাঁচতে তো পারল অন্তত। ধরে নিলো জানের সদকা হিসেবে দিয়ে দিয়েছে সবকিছু মিতুল। “সব দিয়ে দিলাম! যাহ! মর!”

ডিভোর্স হয়েছিলো মিতুলের সেকেন্ড অ্যানিভার্সারির দিনে। ডিভোর্স পেপারটার দিকে ঠায় চেয়ে ছিলো মিতুল। ভাবছিলো ওর হাজবেন্ডের কি একটাবারও হাত কাঁপেনি সাইন করার সময়? দুটা বছর এক মুহূর্তের জন্যও কি ভালোবাসেনি ওকে? শ্বশুরবাড়ি থেকে কিছু আশা করে লাভ নেই। ডিভোর্সের পরে বিভিন্ন সূত্র থেকে মিতুল জানতে পেরেছে, পরেরটা মেরে খাওয়া ওর শ্বশুরশাশুড়ির পুরোনো অভ্যাস। কিন্তু যে মানুষটার হাত ধরেছিলো পরম বিশ্বাসে সে কী করে পারল?
মিতুলের বিয়ের নয় মাসের মাথায় ওর বাবা হার্ট ফেইল করে মারা যান ওর চোখের সামনেই। সেই শক থেকে বেরিয়ে আসতেই অনেকদিন লেগেছে। ইমশোনালি অনেক বেশি ডিপেন্ডেন্ট হয়ে গেছিলো হাজবেন্ডের উপর। ওকে ছাড়া কিছুই বুঝত না মিতুল। তবে সমস্যা ছিলো অন্যখানে...

বিয়ের পর থেকেই ওদের ফিজিক্যাল রিলেশনশিপে কিছু সমস্যা ছিলো। বুঝে উঠতে অনেক সময় লেগে গেছে। কোথায় যেন কী নেই। রেগুলারিটি ছিলো না কোনো। ওর হাজবেন্ডের ছিলো ভীষণ অনীহা। তার ইরেক্টাইল ডিসফাংশন ছিলো। মিতুল ব্যাপারটাকে খুব স্বাভাবিকভাবে নিয়ে তাকে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার অনুরোধ করল। ততদিনে বিয়ের এক বছর হয়ে গেছে। বাচ্চা নেওয়ার একটা চাপ ছিলো ফ্যামিলি থেকে। মিতুলেরও ইচ্ছা ছিলো। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিলো না। না ছিলো ফিজিক্যাল স্যাটিসফ্যাকশন, না বাচ্চাকাচ্চা। মিতুলও ডাক্তার দেখালো। ওর কোনো সমস্যা পাওয়া গেল না। ওর হাজবেন্ডও গেল। কিন্তু কোনো ডাক্তারের কাছেই একবারের বেশি যায় না সে। সেক্সোলোজিস্টের কাছেও যাওয়া হলো। অনেক কান্নাকাটি মান-অভিমানের পর। ডাক্তার কিছু ওষুধ দিলো আর কিছু টেস্ট। হরমোন টেস্ট, স্পার্ম কাউন্ট আরো কী কী। হরমোন টেস্ট ছাড়া আর কোনো টেস্টের রিপোর্ট মিতুল দেখতে পায়নি। তবে ওর হাজবেন্ডের ইরেক্টাইল ডিসফাংশন যে সিরিয়াস পর্যায়ে ছিলো তা বোঝা গেছিলো প্রেসক্রিপশনে ওষুধের লিস্টে ‘ভায়াগ্রা’র নাম দেখে। খুব সিরিয়াস অবস্থা না হলে কোনো ডাক্তার ভায়াগ্রা প্রেসক্রাইব করতে চায় না। মিতুলের সাথে ও হাজবেন্ডের দূরত্ব বাড়তে লাগল। মিতুল যতই চেষ্টা করে, কিছুতেই কিছু হয় না। প্রতি রাতেই হতাশা।

এদিকে বাচ্চা হয় না দেখে শাশুড়ি এমন কোনো কথা নেই যে শোনায়নি। মিতুলের হাজবেন্ড যাকে বলে পুরাপুরি ‘Momma’s Boy’। মিতুল যে তাকে সেক্সোলোজিস্টের কাছে নিয়ে গেছে সেটাও মাকে বলে দিয়েছে। এবং তারা ব্যাপারটাকে মোটেও স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেনি। মিতুলের উপর মানসিক অত্যাচার বাড়তে লাগল দিনেদিনে।

মিতুল এমবিএ করছিলো। ওকে বলা হলো পড়ালেখা বন্ধ করে ‘সংসারে মন দিতে’। ওদিকে শ্বশুর মিতুলের মা-কে চাপ দিতে লাগলো তার ছেলেকে (মিতুলের হাজবেন্ডকে) ঢাকায় একটা ফ্ল্যাট কিনে দিতে। তার ভাষায়, “যা দিয়েছেন সবই তো মেয়েকে, আমার ছেলেকে কী দিলেন?” মিতুল প্রতিবাদ করল। ওর মা অসুস্থ হয়ে পড়ল। হসপিটালে ভর্তি করতে হলো। মা মেয়ে হসপিটালে থাকে। কেউ নেই পাশে। মিতুল আশা করেছিলো ওর হাজবেন্ড একটু সময় দেবে। তার অফিসে যাওয়া-আসার পথেই পড়ে হসপিটাল। আসে না। শ্বশুরশাশুড়ি একবার জিজ্ঞেসও করে না ওরা মা-মেয়ে কেমন আছে।

ওই অবস্থায় ২৮ সেপ্টেম্বর নতুন জবে জয়েন করল মিতুল। কল সেন্টারের জব। জয়েন করার পরদিন সকালের কথা। রাতে হালকা মান-অভিমান হয়েছিল। সকালে আদর করে জড়িয়ে ধরে মান ভাঙাতে গেল মিতুল। এমন জোরে ধাক্কা দিলো মিতুলকে যে দেয়ালের সাথে বাড়ি খেলো ও। কাঁধে প্রচণ্ড ব্যথা পেল। সেই সাথে চিল্লাচিল্লি। সাতসকালে কেমন লাগে? মেজাজ চড়ে গেল মিতুলের।

অফিসে যাওয়ার আগে হসপিটালে মায়ের কাছে যাবে বলে বেরোলো মিতুল। সকাল সাড়ে সাতটার দিকে। ওর হাজবেন্ডই দরজা খুলে দিলো। বের হয়ে মাথা ঠাণ্ডা করে একটা এসএমএস দিলো মিতুল, “tumi je amar sathe kaj ta korla, kototuku fair chilo?” এবং আরো অনেক কিছু। অত সকালে যেতে দেখে মিতুলের মা জানতে চাইল জামাইয়ের সাথে কোনো সমস্যা হয়েছে কি না। মিতুল বললো “হালকা মান অভিমান, ঠিক হয়ে যাবে”। সেদিন মিতুলের মায়ের হসপিটাল থেকে ডিসচার্জ হওয়ার কথা। চারটার মধ্যে অফিস থেকে বের হলো মিতুল। হসপিটাল থেকে বের হয়ে ওর মা বাসায় না গিয়ে মিতুলকে নিয়ে ওর শ্বশুরবাড়ি গেল। ওর শ্বশুরশাশুড়ির সাথে কথা বলে কিছুদিনের জন্য মিতুলকে নিয়ে আসবে। সেদিনের কথা ভাবতে আজও নিজেকে ধিক্কার দেয় মিতুল। মিতুল আর তার অসুস্থ মা ওর শ্বশুরবাড়ির কলিং বেল চেপে যাচ্ছে। ওরা মিতুলদের দেখেও দরজা খুলছে না। পাশের বাড়ির লোকজন, দারোয়ান সবাই দেখছে।

মিতুল মা-কে নিয়ে ফিরে গেল নানীর বাসায়। মিতুল ওর কানাডা প্রবাসী ভাসুরকে ফোন করে জানালো। তাদের মুখে যা শুনল তাতে মিতুল আকাশ থেকে পড়ল। তাদেরকে নাকি বলা হয়েছে মিতুল হাজবেন্ডের সাথে মারামারি করে গহনাগাটি নিয়ে চলে এসেছে। ওর ভাসুরও অবাক। দুপক্ষের জবানিতে কোনো মিল নেই। সে মিতুলকে বললো কিছুদিন মায়ের কাছে থাকতে। সে দেখবে ব্যাপারটা। মিতুল সেই আশায় রইল। এর মধ্যে হাজবেন্ডের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করতে থাকল। তার দিক থেকে কোনো সাড়া নেই। একদিন এক ফুপাত ভাসুর ফোন করে জানালো মিতুলের নামে নাকি তার বাসায় ‘বিচার’ বসবে। ওর মা যেন ওকে নিয়ে সেখানে উপস্থিত থাকে। মা বললো সমস্যা যেহেতু স্বামী-স্ত্রী দুজনের, সবাই একসাথে বসার আগে সে যেন (ফুপাত ভাসুর) ওদের দুজনকে নিয়ে বসে। তাতে সে রাজিও হলো। মিতুলের শ্বশুরবড়িতে সেই ভাসুরের উপস্থিতিতে মিতুল আর ওর হাজবেন্ডের কথা হলো ১ অক্টোবরে। অনেক প্রশ্ন করা হলো। মিতুল জানত না যে ওর সমস্ত কথাবার্তা রেকর্ড করা হচ্ছিলো। এক ভাসুর প্রস্তাব দিলো ওদের আলাদা সংসারের। মিতুল রাজি হয়নি। তার কথা, “আমার হাজবেন্ডকে আমি কেন তার প্যারেন্টসের কাছ থেকে আলাদা করব?”

এরপর সিদ্ধান্ত হলো যে ওরা হাজবেন্ড ওয়াইফ কিছুদিন আলাদা থাকবে, তারপর ওর হাজবেন্ড ওকে নিতে যাবে। মিতুল নিজেও চাচ্ছিলো কিছুদিন মায়ের কাছে থাকতে। ও রাজি হলো। যদি এতে ভালো কিছু হয় তো ক্ষতি কী?
সেই ফুপাত ভাসুরই গাড়িতে করে মিতুলদের পৌঁছে দিলেন ওর নানীর বাড়ি। মিতুল ওর হাজবেন্ডকে মিস করছিলো। মিতুল তখনো জানত না সেদিনের পর আর কখনো দুজন একসাথে বসে ভাত খাওয়া হবে না।

১৩ অক্টোবর ওর হাজবেন্ড ওদের (মিতুল আর ওর হাজবেন্ডের) পরিচিত বন্ধুবান্ধবদের ওর সম্পর্কে বিশাল একটা মেইল পাঠায় যার ভাষা ছিলো এমন:

Dear ****:

It is for your information that my wife & I living separated from 29 September 2011. It was her decision to step out. I know three probable questions started roam your mind: Why?, How? and What?
Whatever the reasons for which she left, let it be personal as our parents already involved in this particular matter after she left. Presently she is staying with her mother.
I have just noticed that she blocked and delete me and my family members from her list in facebook but still communicating with my friends (mutually known to her through me). I am sure you also noticed that. Since she is known to you through me, it is my responsibility to inform you in this regard.
Please use your best conscious sense whether to keep contact with her or not. Please note, I won’t take any responsibility in this regard.
Please keep me and my family in your prayers so that my family and I get over from this emotional and social reputation turmoil. I hope and believe that I will get a breathing space among friends during the transition of social status.

Best regards,

*****

মিতুলের ১৩ দম্পতি বন্ধু একই মেইল পেলো। মেইল পেয়ে বন্ধুরা, তাদের বউরাও বিরক্ত। তারা ফোন, এসএমএস করে জিজ্ঞেস করতে লাগল “WHAT HAPPENED?” মিতুল কী জবাব দেবে। ও নিজেই বুঝতে পারছিলো না কী হয়েছে। হাজবেন্ড-ওয়াইফের মধ্যে কত ঝামেলাই তো হতে পারে। তাই বলে এভাবে কথা ছড়িয়ে বেড়ায় কেউ? মিতুল বিপদের গন্ধ পায়। হাজবেন্ডের সাথে দেখা করার চেষ্টা করে। ওদের বাসায় যায়। অবস্থা আগের মতোই। বাড়িতে গেলে দরজা খোলে না, অফিসে গেলে রিসিপশন থেকেই পিয়ন দিয়ে বিদায় দেয়। ক্লান্ত লাগে মিতুলের। আর কত চেষ্টা করবে, কীভাবে চেষ্টা করবে বুঝে পায় না। কোরবানির ঈদ গেলো। আর কদিন পর ম্যারেজ ডে। ভাবল তখন হয়ত ফিরবে। ফোন করে, এসএমএস দেয়। কোনো উত্তর নেই। অ্যানিভার্সারির দিন রেজিস্ট্রি করা চিঠি এলো। খামের ভেতর ডিভোর্স লেটার। তাতে লেখা:

১) মিতুল কখনোই সংসার করতে চায়নি। বিয়ের এক সপ্তাহ পরই সংসার করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে আর ২৯ সেপ্টেম্বর তারিখে অলংকারাদি নিয়ে মায়ের কাছে চলে যায়।

২) মিতুল ঘুমের ওষুধে আসক্ত।

৩) অনেক পরপুরুষের সাথে মেলামেশা মিতুলের।

৪) মিতুল সন্তানধারণে অক্ষম।

৫) মিতুল ইসলামি শরিয়াহ অনুযায়ী স্বামীর বাধ্য হয়ে চলে না... ইত্যাদি ইত্যাদি

ডিভোর্স লেটার পাওয়ার পরে জানা গেলো মিতুলের নামে বেশ কয়েকটা জিডি করা আছে তাদের এলাকার থানায়, মিতুলের বাবার বাড়ির এলাকাতেও। মিতুল কোনো লিগ্যাল অ্যাকশন নিলেও পুলিশ আগে শ্বশুরপক্ষের কথাই শুনবে। মিতুল জানতে পারে ওরা সবখানে বলে বেড়াচ্ছে মিতুল চাইলেও নাকি কিছু করতে পারবে না। চাইলে মিতুল অনেককিছুই করতে পারে। শুধু মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে চুপ করে থাকে। ওর সরলসোজা ভালোমানুষ মাকে কোর্টের নোংরা জেরার মধ্যে ফেলতে চায় না ও। মিথ্যে বলে জামাইয়ের দোষ বাড়িয়ে দেখানো তার কাজ নয়। মামলা মোকদ্দমায় যে ভূরি ভূরি মিথ্যে সাজানো হবে সে তো জানা কথা।

মিতুল লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়ে ওর বাবার দেওয়া জিনিসপত্র ফেরত চাইলো। তারা গা করল না। জবাব দিলো না কোনো। ওদিকে ছেলের বউয়ের বদনাম করে চলছে তখনো। মিতুল কত খারাপ, ওর মা কত খারাপ, তাদের ছেলেকে কত কষ্ট দিয়েছে এসব বলে বেড়াতে তাদের ক্লান্তি নেই। কিন্তু খারাপ বউয়ের গয়না, আসবাব ফিরিয়ে দেওয়ার বেলায় নেই। ওগুলো নাহয় গেলো। কিন্তু মিতুলের জীবনের দুটো বছর কি পারবে কেউ ফিরিয়ে দিতে?

নভেম্বর-ডিসেম্বর খুব খারাপ গেলো। মানসিক অর্থনৈতিক সবদিক দিয়েই। দুইমাসের জমানো বেতনের সাথে আরো কিছু পার্টটাইম কাজের টাকা মিলিয়ে দুই রুমের একটা বাসা ভাড়া অ্যাডভান্স করলো। মা-কে নিয়ে উঠল সেখানে। বেতন কম। ১৫ হাজারের ১৩ চলে যায় বাসা ভাড়া আর অন্যান্য বিল মেটাতে। মায়ের কিছু সঞ্চয় ছিলো। এই দিয়ে ওদের চলে। মিতুল এখন ভালো আছে, শান্তিতে আছে।
ডিভোর্সে একদিক দিয়ে শাপে বর হয়েছে। মিতুল মানুষ চিনল নতুন করে। যে সম্পর্কে নিঃশ্বাস নেওয়ার জানালাগুলো বন্ধ হয়ে যায়, সে সম্পর্কে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। এখন অন্ততপক্ষে বুকভরে শ্বাস নিতে পারে।

তবে ডিভোর্সের কারণে মানুষের অ্যালিয়েন চাহনি আর আচরণে ঘেন্না ধরে যায় মাঝেমধ্যে। ও বোঝে না ডিভোর্সি মেয়েদের আজবভাবে ট্রিট করাহয় কেন। পুরুষদের কাছে সহযোগিতা আশা করে না, কারণ ডিভোর্সি জানার পর ৯০% পুরুষই কামাতুর দৃষ্টিতে তাকায় কিংবা মনে মনে অনেককিছু করে ফেলে। কিন্তু মেয়েরা বা মহিলারাও কেমন যেন অদ্ভুতভাবে তাকায়, আচরণ পালটে যায়। মিতুলের পরিবারে অনেক ভাবি/বোন/আন্টি আছেন যারা ওর ডিভোর্স নিয়ে যারপরনাই লজ্জিত, বিব্রত। ওর সাথে কোথা বলার সময়ও হয় করুণা কিংবা ঘৃণা নিয়ে তাকায়। অনেককিছু উপেক্ষা করে মিতুল। সবটা পারে না সবসময়। ও মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে একটা এতিম মেয়ের সাথে ওরা যা করল তার প্রতিদান কড়ায়গণ্ডায় আল্লাহ অবশ্যই দেবেন ওদের।

এক্স হাজবেন্ডের কথা ভেবে খারাপ লাগে এখনো। অনেক ভালোবেসেছিলো মানুষটাকে। অনেক বেশি। ঘৃণা করার রুচিও হয় না এখন।

মায়া লাগে কবরে শুয়ে থাকা বাবার জন্য যে অনেক আশা, অনেক স্বপ্ন নিয়ে ওই পরিবারে মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলো। মায়া লাগে ওর মায়ের জন্য যে এখনো বিশ্বাস করতে পারে না তার জামাই এত খারাপ কাজ করতে পারে। মিতুল রাতে ঘুমিয়ে পড়লে ওর মা ওর মুখের দিকে তাকিয়ে জেগে থাকে আর কাঁদে (মিতুলের খালা বলেছে)। এই মায়ের চোখের পানির মূল্য দেবে না ওরা? দিতেই হবে।

এতকিছু হারিয়েও মিতুলের অর্জন নেহাত কম নয়। দুনিয়ার সামনে মাথা তুলে দাঁড়ানোর আর লড়ে যাওয়ার শক্তি বা সাহস হারায়নি এখনো। ওর এক্স হাজবেন্ডের পরিচিত মহলের মধ্যেই কিছু বন্ধু ও পেয়েছে যারা এই বিপদের দিনে ওর পাশে হাত ধরে দাঁড়িয়েছে। এমন কিছু বন্ধু ও পেয়েছে যাদের কাছে ন্যায়বোধ ব্যক্তিগত সম্পর্কের থেকে বেশি মূল্যবান।

গত ছয়টা মাস অনেক খারাপ সময় গেছে মিতুলদের। এমনও দিন গেছে যখন বাজার করার টাকা ছিলো না। চা-বিস্কুট, মুড়ি দিয়ে দিন পার করেছে মা-মেয়ে। তারপরও কারো কাছে একটাবারও হাত পাতেনি। গর্বের সাথে মাথা উঁচু করে বাইরের জগতটার মুখোমুখি দাঁড়াতে পারে এখনো। নিজের ভালোত্ব প্রমাণ করতে জনে জনে গুজব ছড়াতে হয় না বা মেইল করতে হয় না ওর।

মিতুলের আর কিছু হারাবার ভয় নেই এখন। বেশি কিছু চাওয়ারও নেই। এখন শুধু চায় ঈমানের সাথে যেন চলতে পারে, জ্ঞানত যেন কারো সাথে অন্যায় না করে। আর চায় একটুখানি সহযোগিতা, আশপাশের মানুশের কাছ থেকে একটু ভালোবাসা। আর কিছু না।

আর স্বপ্ন আছে নিজের একটা সন্তানের। সে স্বপ্ন কোনোদিন পূরণ হবে কি না তা জানা নেই মিতুলের।


(গল্পের স্থান-কাল-পাত্র সবই সত্য। মিতুলের অনুরোধে প্রকৃত নাম, পরিচয় আড়াল করা হলো।)

Tuesday, April 3, 2012

একজন মনার বেঁচে থাকা (by Delara Hossain): ২য় পর্ব

ইউনিভার্সিটিতে চান্স পেলো মনা। প্রথম সেমেস্টারে আইনের বিষয়, অনেক ভয় হচ্ছিলো তার। ইউনিভার্সিটিতে সবাই ভীষণ স্মার্ট। মনার নিজেকে অনেক অসহায় মনে হচ্ছিলো। প্রথম সেমেস্টারের সময় শেষ হলো, রেজাল্ট দেওয়া হলো। ল কোর্স মনা হাইয়েস্ট মার্কস পেয়েছিলো। এই হাইয়েস্ট মার্কস তার কনফিডেন্স বাড়িয়ে দিয়েছিলো অনেকখানি। আইন পড়তে আর কোনো বাধা তাকে বাঁধ মানাতে পারেনি। ডিপার্টমেন্টে অনেক যুদ্ধ করে নিজের অবস্থান তুলে ধরেছিলো। সে প্রমাণ করেছিলো, সে হলিক্রসের ছাএী ছিলো, যা সে করতে কলেজে থেকে পারেনি। ইউনির্ভার্সিটিতে টিচাররা স্টুডেন্টদের কাছ থেকে আশা করে একজন স্টুডেন্ট যেকোনো বিষয়ে টিচারের কাছে যাবে। মনা সেটা করতে পারত না। আর তাই প্রায় কোর্সে খানিকটা ডিসক্রিমিনেশনের শিকার হতো।

সময় পেরিয়ে যাচ্ছিলো, কিন্তু মনার বাবার এবার শুরু হরো সন্দেহবাতিক। মনা আসলেই পড়ছে নাকি আবার প্রেম করছে, এই নিয়ে প্রায় দিনই মনাকে শুনতে হতো নানান কথা। মনার মা আবার খুব ভালোভাবে তার স্বামীকে সাপোর্ট করতো ।

ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় সারাটাক্ষণ তার মন খারাপ থাকত। তার মন চাইত এমন একজন মানুষ যে সব জেনে গ্রহণ করবে তাকে। এক দুবার ভালোলাগার বিষয়টা যেন পক্কতা পায় সেজন্য কথাও বলেছে কিন্তু দিনশেষে কেউ থাকেনি। যদিও সে তার মনের আসল কথা বলার মতো এমন কাউকে পায়নি। মনা ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস, লাইব্রেরি এসব করতে করতে বেশ বোর হয়ে উঠেছিলো, তাই হঠাৎ ভাবলো কোনো একটা এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজ করা দরকার, আর তাই শখের বশে যোগ দিলো নাটকের ক্লাবে। নাটকের রির্হাসেল তার ভীষণ ভালো লাগত। কিন্তু মনার বাবার ধারণা মনা ছেলেদের সাথে মিশে নষ্ট হয়ে যাবে, কিংবা প্রেম করছে। তারপরও মনা নাটক করল, খুব প্রশংসা পেল নাটকটা। নাটকদলের শাশ্বত ভালোবাসত অনুকে, কিন্তু তাদের মধ্যে চলছিলো নানা সমস্যা যেটা কমবেশি নাটকের সবাই জানত। মনার সাথে ওদের বন্ধুত্ব ছিলো খুব ভালো। নাটক করার সময় মনা কেবল ওদের চারজনের সাথে চলত। দিনটি ছিলো পহেলা ফাল্গুন। মনা বসে ছিলো একা। ক্লাস শেষ করে মন খারাপ করে বসে ছিলো মনা। হঠাৎ করে দেখা শাশ্বতের সাথে। একটা কাজে ডেইলী স্টার যাবে, মনাকে বলাতে সেও গেল। সেদিন কথা হতে হতে শাশ্বত তাদের (শাশ্বত ও অনু) সম্পর্কের কথা আলাপ করল। মনা তাকে বুঝিয়ে বলল কিভাবে এই সর্ম্পক ঠিক করা যায় কিন্তু শেষে গিয়ে শাশ্বত সব ভুলে গেল। মনার দেখানো পথে সে মনাকেই ভালোবাসতে চাইলো। মনারও ভালো লাগত শাশ্বতকে। কিন্তু ধর্মের ব্যবধানের কী হবে? শেষ পর্যন্ত শাশ্বত আর কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করল মনাকে। শাশ্বত মুসলমান হয়েছিলো নিজের ইচ্ছায়। মনা খুশি হয়েছিলো, কিন্তু মনার বাবা কী করবে? মনা শাশ্বতকে নিজের সব কথা বলেছিলো, তাতে তার কোনো সমস্যা ছিলো না , বুকে আগলে নিলো মনাকে শাশ্বত।

শাশ্বত খুব অন্য রকমের একজন ছেলে। তার জীবনে কাছে কালচার সবচেয়ে প্রিয়। ও ভীষণ সৎ কিন্তু সিরিয়াস না। মনাকে বিয়ে যখন করল ওর লাস্ট সেমেস্টার ছিলো। মনা ভেবেছিলো ও হয়তো চাকরি খুঁজবে কিন্তু ও যেহেতু সিরিয়াস না তাই মনা ওকে সাহায্য করেছিলো। শাশ্বত আর মনার বিয়ের কাহিনি নিয়ে আর একটা গল্প লেখা যাবে, সেটা আর একদিন শেয়ার করা যাবে। শাশ্বতের বাসায় ওদের বিয়ের কথা জানিয়েছিলো মনার বাবা। মনার বাবা কীভাবে জেনেছিলো তাদের বিয়ের কথা, তা এখনও মনার কাছে অজানা। শাশ্বতর বাসায় খুব খারাপ কিছু প্ল্যান করছিলো ওর বাবা মা তাই রাতের অন্ধকারে শাশ্বত চলে এসেছিলো মনার বাসায়। মনার বাবা, প্রথমে ডিভোর্স করিয়ে দিতে চেয়েছিলো। শাশ্বত যখন বাসায় এসেছিলো ওদেরকে আলাদা থাকতে হতো মনারই বাসায়। একসাথে ওদের ঘুমাতে দিত না যদি বাচ্চা হয় তাই। তখনও শাশ্বতের কোনো চাকরি নাই, মুক্তি মেলার কোনো পথ নাই মনার। মনা অনেকবার বলেছে শাশ্বতকে, মনার বাবাকে যে সে এই বাসায় থাকবে না। যেহেতু শাশ্বতের কোনো চাকরি নাই আর মনার পড়া শেষ হয় নাই তাই মনারও বাসা আর ছাড়া হলোনা। এদিকে প্রতিদিন শাশ্বত অপমানিত হয়, খারাপ লাগে মনার কিন্তু শাশ্বত খুব একটা বোঝে না এসব। শাশ্বতর বাবা মা ওদের বিয়ে মেনে নেয়নি, বরং মেরে ফেলতে চেয়েছিলো ওকে, ইউনিভার্সিটি থেকে তুলে নিয়ে আসতে চেয়েছিলো মনাকে। তাই ওরা দুজন মনার বাসাকে নিরাপদ ভাবত। মনার বাবা শাশ্বতকে এমবিএ পড়ার জন্য টাকা দিলেন। মনার বাবা হয়ত চেয়েছিলো মনার জীবনের ক্ষতিটা পূরণ করতে। কিন্তু খুশি না মনার মা, তার জীবনে টাকা অনেক বড়, তাইতো সে প্রতিনিয়ত অপমান করত ওদেরকে।

মনার অনুরোধে শাশ্বত একটা চাকরি পায়। বেতন খুব বেশি না, তবুও মনা আর শাশ্বত খুশি। বেকারত্ব ঘুচলো শাশ্বতর। প্রতিদিন শাশ্বতর অপমানিত হওয়া নিয়ে মনা যখন শাশ্বতকে বোঝাতে যেত ওদের মধ্যে ঝগড়া হতো রাতের পর রাত,কখন কখনও মার খেত মনা। তারপরও ভরসা ছিলো মনার শাশ্বতর প্রতি। মনা নিজের মায়ের বাসায় প্রতি মাসে খাওয়া খরচের টাকা দিত, যেন তার মা তার স্বামীকে অপমান না করে। শাশ্বত এই চাকরিটা পাওয়ার আগে আর দুটা চাকরি পেয়েছিলো মনার সাহা্য্যে, কিন্তু কোথাও বছরখানেক কাজ করতে পারে নাই, যদিও বিয়ের আগে তার টানা চার বছরেরে অভিজ্ঞতা ছিলো। শাশ্বত খুব সিরিয়াস না, এসব নিয়ে একবার ঝগড়া করে মনা মার খেল। শাশ্বতর চড়ের কারণে আজ মনার বাম কানের পর্দায় ছিদ্র। তবুও মনা সব মেনে নেয়। চাকরি পাওয়ার পর মনা চাইত ওর প্রতিদিনের খরচ শাশ্বতর টাকায় হবে, আর তাই করল মনা। এই নিয়ে ও ভীষণ রাগ মনার মায়ের কেন এত কিছু করে মনা, তাই মনার মা শাশ্বতকে জুতা দিয়ে মারতে চাইলো। এভাবে দেখতে দেখতে কেটে গেল আড়াই বছর। মনা পাশ করল, আইন পেশায় থাকবে বলে প্র্যাকটিসে গেল। খুব কষ্ট কিন্তু টাকা নাই। ভীষণ মন খারাপ মনার। সে আর তার বাবা মায়ের বাসায় থাকবে না। কিন্তু সাহস করে না শাশ্বত। শাশ্বত দায়িত্ব নিতে অনেক ভয় পায়।

একদিন বাসায় প্রচণ্ড ঝগড়া হলো মনার মায়ের সাথে মনার আর শাশ্বতর। তারপর মনা রাগ করে বাসা ছেড়ে বেরিয়ে গেল। মনার মা খুব খুশি, কিন্তু মেয়ের এই অসহায়ত্ব বোধ হয় মনার বাবার কারণে এটা সে বুঝতে পেরেছিলো। তাই সে অনেক চেষ্টা করত ওদেরকে আর্থিকভাবে সাহায্য করতে। ছোট একটা ছাদের ঘর, মনা লেখাপড়া জানা একজন মেয়ে হয়েও কিছুই করতে পারছিলো না । মনা শাশ্বতকে খুব ভালোবাসে। মনার ওই সমস্যাগুলোর জন্য সে শারীরিকভাবে শাশ্বতের কাছে যেতে পারত না। শাশ্বত এ নিয়ে কিছু বলত না কারণ শাশ্বতেরও কিছু সমস্যা ছিলো। অনেক কষ্টে চলছিলো তাদের জীবন। বিধাতা হঠাৎ মুখ ফিরে চাইলো। অনেক বড় একটা জায়গায় চাকরি পেলো শাশ্বত। মনাই বলেছিলো অ্যাপ্লাই করতে। তাদের সব কষ্ট দূর হয়ে যাবে ভেবেছিলো মনা নতুন বাসা, নিজের গোছানো সংসার এসব দেখে। মনা মাস্টার্সে ভর্তি হলো। সে ওখানে রেজাল্ট ভালো করায় টিচিং অ্যাসিস্টেন্টের কাজ পেলো। খুব একটা ব্যস্ত থাকতে হয় না মনাকে। তাই মনা ভাবছিলো এবার সন্তান হলে ভালো হয়, বিয়ের চার বছর হয়ে গিয়েছে যেহেতেু। মনার নতুন সংসার দেখে তার বাবা মায়ের আদর আর শেষ হচ্ছিলো না। মনাও তাদের থেকে দূরে থাকতে পারল না শুধু ছোট বোনের কথা ভেবে। মনার এই ভুল তার জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়ালো। এদিকে শাশ্বত চাকরি, পড়াশনা, বাসার দায়িত্ব নিয়ে হিমশিম খাচ্ছিলো, সময় দিচ্ছিলো না মনাকে। মনা প্রায় একা একা থাকত, কাঁদত, মানসিকভাবে খুব পাগল হয়ে উঠেছিলো। অনেক ঝগড়া করত, খুব রাগ দেখাত,তারপর অনেক কাঁদত। এরপর চুপ। কিছু মনে নেই তার।

শাশ্বতর পড়তে ভালো লাগে না, ও শুধু চায় বিলাসিতার পরিশ্রমবিহীন জীবন। মনার মনের কষ্ট অনেক বাড়তে থাকে, তাই তাবিজ নিলো, কবিরাজি ঔষধ খেলো যেন তার সন্তান হয়। মনার সমস্য ছিলো, গত চার বছর ধরে বার্থ কনট্রোলের জন্য কিছু করত না শুধু তারিখ মেনে চলত। তাছাড়া মনার অনেক মাইগ্রেনের ব্যথা ছিলো। সব মিলিয়ে মা হওয়া একরকম কঠিন ছিলো তার জন্য। এগুলো শাশ্বত ও বুঝত না। শাশ্বত মনাকে ভালোবাসে, কিন্তু তার দৃষ্টিতে মনা অনেক অ্যাম্বিশাস, কেননা মনা অনেক পড়তে চায়। মনাকে সে রুড আর ডমিনেটিং মনে করে। আসলে মনা অনেক নিয়মমাফিক চলতে পছন্দ করে। হলিক্রসে শিখেছিলো এসব সে। এর মধ্যে মনার ও একটা ভালো চাকরি হলো। চাকরি পাওয়ার পর পর বিধাতা মনার মনের আশা পূরণ করল। মনা মা হতে চলল। মনা অনেক খুশি। মনা আর শাশ্বত চাকরি পেয়ে মনার বাসার জন্য অনেক টাকা খরচ করত। প্রত্যেকের জন্মদিনে দামি উপহার, ঈদে দামি দামি জিনিস, শুধুমাত্র মনার আর মনার স্বামীর অবস্থানকে উন্নত করার জন্য। মনার বাবা খুব লজ্জা পায়, মুখ ফুটে কিছু বলে না। তাই সে সিদ্ধান্ত নিলো মনা আর শাশ্বতকে বিদেশ পাঠিয়ে দেবে। মনা আসলে ওর পরিবরের মানুষের জন্য করে বোঝাতে চেয়েছিলো কিন্তু সেটাকে ওরা এখন ও ভাবে মনার দুর্বলতা। মনার মা আবার মনার বাবার এই পরিবর্তনে খুব বিরক্ত। শুধু তাই নয়, মনার বাবা মনাকে আর তার স্বামীকে আবার বাসায় নিয়ে আসলো। মনার ও উপায় ছিলো না। ও তখন পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। একজন লোক নেই ওকে সাহায্য করার। সকালে না খেয়ে অফিস যায়, সারাদিন খারাপ লাগে। বোঝার কেউ নেই। দুপুরে দোকানের মসলাদার খাবার। তবুও একদিনের জন্য মনার মা তার জন্য খাবার করে দেননি। ডাক্তার মানা করা সত্ত্বেও মনা চাকরিটা করত। বড় হাসপাতালে বাচ্চা জন্ম দিতে অনেক টাকা লাগে। আর মনা এবার তার সন্তানের জন্য কারো কাছে ছোট হবে না। বাবার বাসায় এবার মনা অনেকগুলো টাকা দিয়ে থাকত, তাই মনার মায়ের খুব একটা যন্ত্রনা ছিলো না।

মনার সেই দশ মাসের কথা অনেক কষ্টের, ওর খুব বাসার খাবার খেতে ইচ্ছা হতো। বিছানায় ঘুমাতে ইচ্ছা হতো। বিয়ের পর সে তার মায়ের বাসায় কোনদিনও বিছানায় ঘুমায়নি। মনা যেখানে কাজ করত সেখানে মনাকে পেইড ম্যাটার্নিটি লিভ দেবে না। মনার চিন্তা বেড়ে গেল। এদিকে শাশ্বতর প্রজেক্টও শেষ হয়ে আসছে। তার উপর আবার শাশ্বত এমবিএতে মিনিমাম রেজাল্ট রাখতে না পারায় ওই ইউনিভার্সিটি ছাড়তে হবে। চিন্তায় শুধু কাঁদে মনা, আর দোয়া করে বিধাতার কাছে। মনা কয়েকটা নতুন চাকরিতে অ্যাপ্লাই করল। শাশ্বতকেও বললো। কিন্তু ওর তখন বিশ্রাম চাই, আর পরিশ্রম করতে পারছে না। মনা ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাক পেল। শাশ্বত যেতে দিলো না শরীরের কথা ভেবে। আর আশা দিলো ও সব ম্যানেজ করে নেবে। শাশ্বত অন্য ইউনিভার্সিটিতে ক্রেডিট ট্রান্সফার করল। এমবিএ শেষ না বলে জবে অ্যাপ্লাই করলেও কোথাও থেকে ডাক পেত না। শেষ পর্যন্ত অনেক কষ্ট করে বাচ্চাটা হলো। বাচ্চা হওয়ার দু মাসের মাথায় বাচ্চার বাবার চাকরি নেই। তাই মনা ওই শরীর নিয়ে নতুন চাকরি খুঁজলো এবং পেল। সন্তান আন্ডার ওয়েইট। বুকের দুধের অনেক প্রয়োজন। বুকের দুধ গড়িয়ে পড়ে, কিন্তু মনার সন্তান পেত না। মনাকে নতুন চাকরিতে ফিল্ড ট্রিপ করতে হতো। শাশ্বত এখন সারাদিন বাসায় থাকে। মনা বাসায় থাকে না বলে সারাদিন টিভি দেখার অফুরন্ত সুযোগ। বাচ্চাটা থাকে মনার মায়ের বাসায়, সারাদিন পর বাচ্চাকে নিয়ে আসে অফিস থেকে আসার পথে। তারপর এই শরীর নিয়ে সন্ধ্যায় রান্না করা,ঘরের কাজ.....
দেখতে দেখতে বাচ্চার বয়স এক বছর হয়ে গেছে, এখনও অবধি কোনো চাকরি নাই শাশ্বতর। মাস্টার্সটা শেষ করছে অনেক কষ্টে। জবে অ্যাপ্লাই করে কিন্তু ইন্টারভিউ হলে ঠিকমতো পড়াশনা করে না, সেটাও পড়িয়ে দিতে হয় মনাকে। এনজিওতে বেতন বেশি, তাই ওখানে কাজ করতে চায় অথচ পড়েছে এমবিএ। এনজিওতে যে কাজ করতে হবে সেটাও মনার আইডিয়া। শাশ্বত শুধু চায় গান করবে, নাটক করবে। এটাই তার জীবন।
মনা মাস্টার্সে হাইয়েস্ট ডিস্টিংকশন পেয়েছে এত কাজের মাঝেও। এবার ভাবছে হাইয়ার স্টাডিজের কথা। এ কাজেও একবিন্দু সাহায্য করেনি শাশ্বত। অফিসের ফাঁকে ফাঁকে সময় বের করে কাজগুলো শেষ করল। আমেরিকার একটা ইউনির্ভাসিটি থেকে ইমেইলে জানল মনাকে আই-২০ দেওয়া হবে, তাই মনার বাবা বললো বাসাটা ছেড়ে মনার বাবার বাসায় যেতে। মনা দেখল এ কাজটা করলে কিছু টাকা জমবে। এদিকে আবার মনা তার ছোট বোনের বিয়ে ঠিক করার কাজ করছিলো। খুব ভালো একটা পরিবার। মনা তার স্বামী, সন্তান নিয়ে মনার বাবা মায়ের বাসায়। কয়েকদিনের মধ্যে বোনের বিয়ে হয়ে যাবে।
দিনটি ছিলো, ২৬শে নভেম্বর ২০১১। মনা অনেক খুশি। বোনের বিয়ে ফাইনাল। দুপুর তিনটায় ফোন করে ছেলে জানালো মনার বোনকে বিয়ে করা সম্ভব না, কারণ "he is not physically attracted to her"।
২৮ তারিখ মনার I-20’র হার্ড কপি বাসায় এলো। সবাই জানলো , কিন্তু বোনের এই ঘটনার জন্য সে যাবে না।

আজ প্রায় চার মাস। মনা পড়তে যাবে বলে অফিসকেও নোটিশ করেছিলো তাই আজ তারও চাকরি নাই। মনার বিয়ের পাঁচ বছর শেষ হবে আর কিছুদিন পরে, কিন্তু বিধাতা এতই নির্মম যে মনাকে সে ফিরিয়ে দিয়েছে সেই পিছনের কষ্ট। মনা, শাশ্বত এখনও বেকার, ওদের সন্তানের করচ চারানোর টাকা ও তাদের নেই। জমানো সব টাকা খরচ হয়ে গেছে। এতকিছুর পরও শাশ্বত সিরিয়াস না।
মনা এখন আর শাশ্বতকে ভালোবাসে না । মনাকে সে বুঝল না। কিছুই করতে পারে না সে মনার আর তার সন্তানের জন্য। এখনও মনার মা অপমানিত করে। নতুন করে যোগ হয়েছে মনার সন্তান। মনার বাবা প্রমিজ করেছে মনাকে সে কিছু টাকা দেবে পড়ার জন্য। মনা এবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে শাশ্বতর সাথে থাকবে না। মনা নতুন একটা চাকরি পেলে তার সন্তানকে নিয়ে এ বাসা ছেড়ে সবাইকে ছেড়ে চলে যাবে। মনা ডিভোর্স চেয়েছে। মনা মানসিকভাবে অসুস্থ। সেই অসুস্থতা তাকে শারীরিকভাবে অসুস্থ করে তুলছে। শাশ্বতও মেনে নিয়েছে। বলেছে নতুন চাকরি পেলে ডিভোর্স দিয়ে দেবে। যে স্বামী কারো দায়িত্ব নিতে পারে না তার সাথে থাকা অসম্ভব।

Dear Readers please do suggest Mona, whether is it right decision or not.


দু'মাস পর...
মনা বিদেশে পড়তে যাওয়ার জন্য সুযোগ পেয়েছে, মনার বাবা তাকে ফাইনান্সিয়ালি সাহায্য করছে। কিন্তু অল্প কিছু টাকার জন্য হচ্ছে না। শাশ্বত, মনা ওরা দুজনে ওদের সেভিংসও দিয়েছে, তবুও হচ্ছে না। য়াত্মীয়, বন্ধু সবার কাছে সাহায্য চেয়েছে, কেউ দিলো না। সবার নানা রকম সমস্যা। মনার প্রয়োজন ৩ লক্ষ টাকা, তাহলে মনা তার স্বামী, সন্তান, নিয়ে একসাথে যেতে পারবে। মনা কিন্তু সবার কাছে একসাথে এত টাকা চায়নি।

শাশ্বত আপ্রাণ চেষ্টা করে ও কারো কাছে ধার পাচ্ছে না। মনার এত দিনের স্বপ্ন তবে কি ভেংঙে যাবে?
না, শাশ্বত তা হতে দিচ্ছে না। মনা পড়বে, অনেক বড় হবে, মনা-ও তো ওর জন্য কম করেনি।   তাই, যেই শাশ্বতর ঘর মনা একবার ছেড়ে চলে যেতে চেয়েছিল, সেই শাশ্বত মনার জন্য কিডনি ডোনেট করে ৫ লক্ষ টাকা যোগাড় করে দিচ্ছে। শাশ্বতর অপারেশন আগামী ১৫ তারিখ।

আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ। আপনারা শাশ্বতকে ছাড়তে মানা করার কারণে মনা তাকে একটা সুযোগ দিয়েছিল। আর আজ সুযোগ পেয়ে, শাশ্বত আবার নিজের ভালোবাসাকে প্রমাণ করল।
শাশ্বত বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে যাবে, যাদের কে কিডনি ডোনেট করবে তাদের সাথে। আপনারা ওর জন্য দোয়া করবেন যেনো সে সুস্থ হয়ে ফিরে আসে তার প্রিয় মনা এবং তার সন্তানের কাছে।

লেখক:
দিলারা হোসেইন


একজন মনার বেঁচে থাকা (by Delara Hossain): ১ম পর্ব

একজন মেয়ের গল্প শেয়ার করব । মেয়েটা যখন ক্লাস ফাইভে তখন সর্বপ্রথম সে ফিজিক্যালি অ্যাবিউজড হয়। এর পর থেকে প্রতিদিন হতো কখনও কাউকে বলেনি শুধু তার ছোট বোন জানত। সে তার মাকে জানাতে পারেনি। প্রথম বুঝেইনি সে অ্যাবিউজড হচ্ছে, আর ভয় পেত যদি তার মা এটা জানার পর মারা যায় কোথায় যাবে তারা? কারণ বাবা তো...

এই চিন্তাটা করতে করতে ক্লাস সেভেন, দুই বোন মিলে অনেক চিন্তা করল, কিন্তু মাকে জানাতে পারলো না । বড় বোন শুধু ছোট বোনকে আগলে রাখলো, অ্যাবিউজের প্রথম লক্ষণগুলো জানিয়ে দিলো। ছোট একটা বাসা ,দুই বোন ,মা আর বাবা। মায়ের শারীরিক সমস্যার জন্য মা বাবা একসাথে এক বিছানায় ঘুমাতেন না। বড় বোন বাবার কাছে, ছোট বোন মায়ের কাছে। দিন যায় ,রাত যায়,সময় গড়িয়ে চলে,কিন্তু সময় বদলায় না কেবল বড় মেয়ে মনার। আগে বাসায় কেউ না থাকলে তখন,কিন্তু রাত গড়ালেই তার শরীর উন্মাচিত হত জন্মদাতার কাছে, কখন ইনটারকোর্স করতেন না পাছে অন্য কোন সমস্যা হয়, সেই ভেবে।

মনার বাবা মা ভালোবেসে বিয়ে করেছিল, কিন্তু ঐ লোকটা প্রেম একবারে সহ্য করতে পারে না । সে মনে করে মেয়েরা প্রেম করলে নষ্ট হয়। কঠোর শাসনের মধ্যে রাখতেন, কারো বাসায় যাবে না,লুজফিটিং এর জামা পরতে হবে,সাজগোজ করা যাবে না,হৈচৈ করা যাবে না,সারা দিন বাসা, লেখাপড়া,টিভি দেখা এ-ই।
সময় গড়ালো,মনার মা কোনোদিনও জানলো না এই ভয়াল ঘটনার কথা। মনা এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে,রাত জেগে তাকে পড়তে হয়,খুব সাদামাটা একটা স্কুলে পড়ত, স্বপ্ন ডাক্তার হবে। মনা ভালো ছাএী ছিলো । মনা এখনও নগ্নভাবে উন্মাচিত হয়,মনটা প্রায়ই খারাপ থাকে তার।

কোচিংয়ে যায় সে,সেখানে একজন সিনিয়র ভাইয়াকে তার ভালো লাগে,কিন্তু বলতে পারে না। পরে বন্ধুদের সহযোগিতায় মনের কথা খুলে বলল। সিনিয়র ভাইয়া তাকে জানালো তুমি পরীক্ষায় ভালো করে ভালো কলেজে চান্স পেলে আমার উত্তর পাবে। সিনিয়র ভাইয়া মনার ভালো লাগার কথা বুঝতেন কিন্তু কিছু বলেননি। সিনিয়র ভাইয়া ভীষণ মেধাবী ছিলেন,ভীষণ বাস্তববাদী একজন মানুষ ছিলেন । তাই তার প্রতি এত ভালোবাসা,কত স্বপ্ন,তাকে মুক্ত করে নিয়ে যাবে, ভালোবাসার বাহুডোরে মনাকে রাখবে।

মনা যখন রাত জেগে পড়ত,তখন টিভি চলতো আর টিভিতে চলত 3X, আর সেটা অবলোকন করতেন মনার জন্মদাতা। দুই রুমের বাসায় একরুমে ছোট বোন আর মা ঘুমাতেন,আর অন্য ঘরে প্রতিনিয়ত যন্ত্রণায় ছটফট করত মনা।

এসএসসি পরীক্ষা শেষ। রেজাল্ট 4.50 without 4th subject। এবার কলেজ ভর্তির পালা,ঢাকার সেরা কলেজ Holy Cross-এ সে চান্স পেলো। মনে মনে অনেক খুশী মনার স্বপ্নপূরণের আর বাকি নেই, ফোন করলো সিনিয়র ভাইয়াকে,জানালো মনার ভর্তির কথা, কিন্তু বিধাতা বোধ হয় মনার মুক্তি চাননি আর তাই সে জানলো ঐ ভাইয়া বিবাহিত। স্বপ্ন শেষ।

মনা তার প্রিয় কলেজে চান্স পাওয়ার পর অনেক খুশী,খুশী তার মা এবং বাবা (বাবা ডাকতে হয়, কারণ ডাকার মতো আর কোন শব্দ মনার জানা নেই)।

আজকাল অনেক বেশীই আপসেট থাকে সে। সেদিন ক্লাসে ‍সিস্টার ফিজিক্যাল অ্যাবিউজ, নরমাল টাচ এসবের কথা বলছিলেন,চোখটা ছানাবড়া মনার, কী ভুল সে করেছে, কত কিছু সে হারিয়েছে, কোনো পুরুষই তাকে আর গ্রহণ করবে না। মনা তো হারিয়েছে তার সম্ভ্রম। সাইকিয়াট্রিস্টরা বলেন , এই ধরনের ঘটনায় ভিক্টিম অনেক ভয় পায়, নিজেকে অনেক দুর্বল ভাবে তাই সে শেয়ার করে না।

সব ভুলে মনা আর তার ছোট বোন সিদ্ধান্ত নিলো সে তার মা কে সব জানাবে। জানালো হলো। কিন্তু ....
মা খারাপ বলল মনাকে, ওকে বলল আত্মহত্যা করতে, মেনে নিতে পারলো না মনার মা । মনা নিজেকে অনেক অসহায় ভাবতে শুরু করলো। মনার নিজেকে তার বাবার কাছ থেকে দূরে রাখতে চেষ্টা করতে শুরু করল, কথা কম বলত, কিন্তু মানতে পারলো না মনার মা। রেগে একাকার । মনার মা নিজের মান সম্মানের ভয়ে তার স্বামীকে ছাড়লেন না। সমাজ কী বলবে? মনারা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল তাই মনার মা চায়নি নিজেকে আর্থিকভাবে অসহায় অবস্থায় দেখতে।

মনা চল্লিশটা স্লিপিং পিল খেলো, মৃত্যুও ধোঁকা দিলো মনাকে। সব কষ্ট সহ্য করতে পারছিলো না মনা। ক্লাসে প্রতিদিন আসে, কিন্তু কি পড়ায় কিছুই মনার মাথায় ঢোকে না। এইচএসসি পরীক্ষার পালা, মনা মডেল টেস্ট দিতে যায় কিন্তু পরীক্ষা তার হয় না। কলেজে টেস্ট পরীক্ষায় ০, ১৪, ২৬, এই নম্বর পেয়েছিল কেমিস্ট্রি, ম্যাথ আর ফিজিক্সে। মনা খারাপ ছাএী ছিলো না। কিন্তু আজ কিছুই সে পারছে না। অন্যদিকে মায়ের খারাপ ব্যবহারে তার মন শুধু চাইত সে কবে এই বাসা থেকে চলে যাবে। মনা কেমিস্ট্রি এবং ফিজিক্সের খাতা সাদা রেখেছিল। স্বপ্নে দেখেছিল তার রোল নম্বরটা ফেলের লিস্টে। এই স্বপ্নটা সত্যি হয়েছিল।

আজ সেই সময়টা পার হয়েছে। মনার বয়স ২৮ বছর।
she is a lawyer now. She accomplished her degree from a private university. She tried her level best for public university but unfortunately that did not happen. She had to depend on her parents again; she has not any other option. Mona wanted to study, she wanted to establish herself, but Mona was not happy because she wanted to get rid of her family and parents but that never happened. Mona did not have enough money to support herself, that’s why she could not do so.

Till now Mona is not happy, this is the first part of the story.

লেখক:
দিলারা হোসেইন