Sunday, July 7, 2013

নেমেসিসের গল্প



"ক"
আমি তখন ক্লাস সেভেনে। বয়সের তুলনায় দেখতে ছোট ছিলাম। সেক্সুয়াল জ্ঞানও ছিলো না কোনো। দেখতে ছোটখাটো হওয়ায় আঙ্কেল-আন্টিদের কোলে উঠতাম তখনো। এক মধ্যবয়স পেরুনো ভদ্রলোকতার সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করেছিলো। বিভিন্ন গল্প বলে আমাকে ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা করছিলো যাতে আমি বুঝতে না পারি যে সে আমার শরীরের সাথে কিছু একটা করার চেষ্টা করছে। আমার দুই পা তার পায়ের দুপাশে ঝুলিয়ে গল্প করছিলো আর পেনিট্রেশনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। শুরুতে কোলে নেওয়ার ভঙ্গিটা আমার অদ্ভুত লাগলেও গল্প করতে করতে ভুলে গেছিলাম। বাড়ির সবাই তখন ভাতঘুমে। গল্প করতে করতে হঠাৎ অনুভব করলাম আমার দুই পায়ের ফাঁকে শক্ত কিছু একটা বাড়ি খাচ্ছে। একটু অবাক হলাম এই ভেবে যে লোকটার লুঙ্গির নিচে শক্ত কী থাকতে পারে! এরপরই টের পেলাম চাপ বাড়ছে। কোথা থেকে যেন একরাশ ভয় এসে ভর করল মনে। জানি না লাখ লাখ বছরের human instinct কি না, মাথার মধ্যে কে যেন চাপা স্বরে বললো, “এই মেয়ে, পালাও!আমি এক ঝটকায় কোল থেকে নামলাম। সে আমার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছিলো। অন্য হাত দিয়ে সেই হাতটা ছুটিয়ে দৌড় দিয়ে আমার পড়ার ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলাম। এরপর এক মাস ঘুমাতে পারিনি। ওই ঘটনার কারণেই যে ঘুমাতে পারছি না তা মানতে দিচ্ছিলো না মন। শুধু বুঝতাম আমার মাঝে একরাশ ভয়। আম্মু ঘুমানোর সময় আলো নেভাতে এলে কান্না শুরু করে দিতাম। সবাই ঘুমিয়ে পড়লে আব্বু-আম্মুর রুমে গিয়ে মেঝেতে বসে চুপচাপ কাঁদতাম। মনে হতো, সবাই ঘুমাচ্ছে, আমি কেন ঘুমাতে পারছি না। টের পেলাম মাসখানেক পর যখন লোকটাকে আবার দেখলাম তখন। ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছিলাম। বুঝলাম এটাই সেই ভয় যা আমাকে তাড়া করে ফিরছে। কিন্তু ভয়টা যে কীসের জন্য তাও বুঝতে পারছিলাম না। কারণ পেনিট্রেশন সম্পর্কে আমার কোনোই ধারণা ছিলো না। কাউকে কোনোদিন কিছু বলিনি। ভয় হচ্ছিলো আমাকে হয়ত বকা দেবে বা আমার কথা হয়ত বিশ্বাস করবে না। এরপর সময়ের সাথে সাথে অনেক স্মৃতির ভারে এই স্মৃতি চাপা পড়ে গেল। কলেজে গিয়ে বান্ধবীদের সাথে বাঁদরামোর ছলে শারীরিক সম্পর্কের ব্যাপারে ধারণা পেলাম। তখন বুঝলাম কী হতে যাচ্ছিলো আমার সাথে। কিন্তু সেই ভয়, খারাপ লাগা ততদিনে মিলিয়ে গেছে। যেন বইয়ের পাতায় পরা অন্য কারো জীবনের গল্প, যা নিয়ে আমার মধ্যে কোনোই অনুভূতি অবশিষ্ট নেই আর।

তবে আমার স্বভাবে তা প্রভাব ফেলল। সেই প্রভাব ছায়াবিস্তার করল আমার পরবর্তী জীবনেও। বিবাহবহির্ভূত যেকোনো শারীরিক ব্যাপারকে প্রবলভাবে ঘৃণা করতে শুরু করলাম। কারণ যৌনতা আমার কাছে একটা কষ্টের নাম। আরেকটু বড় হয়ে বিশ্বাস করতে লাগলাম যে শুধু বিবাহবহির্ভূত না, বরং যেকোনো ভালোবাসাহীন শারীরিক সম্পর্কই প্রচণ্ড ঘৃণ্য। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে হলেও। কিছুটা পুরুষবিদ্বেষীও হয়ে উঠলাম। তবে সময়ের সাথে সাথে এই বিতৃষ্ণা কমেও এলো। আমি ভালোবাসলাম। সে মিথ্যা বললো, শারীরিক সম্পর্কের জন্য চাপ দিলো, সরে এলাম। আবারো ভালোবাসলাম। এবার সবকিছু উজাড় করে। Went to second base before marriage without feeling bad. In fact it felt wonderful. I was completely cured of my past. Or so I thought...

"খ"
আমার নতুন বিয়ে। দুবছরের প্রেম ছিলো। শ্বশুর-শাশুড়ি ভীষণ ধার্মিক। দুজনেই খুব হাসিখুশি। শাশুড়ির প্রতি শ্বশুরের অগাধ ভালোবাসা। সন্তানদের অতি আদরে মানুষ করেছেন। সবকিছু মিলে সুখী পরিবার। আমি বড় হয়েছি আম্মুর শাসনের সংসারে। আদিখ্যেতায় আমরা অভ্যস্ত না। নিজেদের কাজ আর ত্যাগের মধ্যে দিয়ে পরস্পরের পরি ভালোবাসা প্রকাশ করতে শিখেছি আমরা। কোনোদিন বাবা-মাকে জড়িয়ে ধরেছি বলে মনে পড়ে না। এদিকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন সারাক্ষণই পরস্পরকে জড়িয়ে ধরছে, চুমু খাচ্ছে। আমার অনভ্যস্ত চোখে এগুলো বাড়াবাড়ি ঠেকে (শুধু আমার না, আরো অনেকেরই)। শুরুতে আমাকেও যখনতখন জড়িয়ে ধরত, চুমু খেত। আমি অস্বস্তি বোধ করতাম। কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবো বুঝে পেতাম না। এমনকি মেয়েরা ছুঁলেও। আমার বর ছাড়া কারো স্পর্শ সহ্য করতে পারতাম না। এখনো পারি না। তাদের এই জড়িয়ে ধরা কমে এলো। আমিও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম (উল্লেখ্য, আমার শ্বশুর কখনো জড়িয়ে ধরেননি আমাকে)।

শ্বশুরবাড়িতেই থাকি বেশিরভাগ সময়। ছোটবড় এটাওটা সমস্যা মিলিয়ে দিন কেটে যাচ্ছিলো। শ্বশুরবাড়ির সবার সাথে দূরত্ব বজায় রেখে চলতাম বিভিন্ন কারণে। একদমই নিজের মতো দিন কাটাতাম। তারাও বাধা দেননি কখনো।

কিছুদিন আগের কথা। অফিসে জরুরি কাজ। তাড়াহুড়া করে বের হয়ে যাচ্ছিলাম। বাসায় শ্বশুর ছাড়া আর কেউ ছিলো না। বের হওয়ার পথে আমাকে আটকালেন- "মা, তোমাকে না খেয়ে যেতে দিবো না।" জোর করে খেতে বসালেন। নিজে খাবার বেড়ে বসে থেকে পুরোটা খাওয়ালেন। আমি অবাক। হাসিও পাচ্ছিলো উনার ছেলেমানুষি দেখে। খাওয়াশেষে বের হওয়ার সময় বললেন, "মা, আমাকে ছুঁয়ে প্রমিজ করো কখনো আর না খেয়ে অফিসে যাবা না।" আমি হেসে উনার হাত ছুঁতেই উনি টান দিয়ে আমাকে নিজের কোলে বসিয়ে জড়িয়ে ধরলেন। জোরে চাপ দিয়ে বলতে লাগলেন, "মা, আমার মেয়ে তুমি। ছেলের বউ না। তোমার হাসিমুখটা ছাড়া আমার আর কিছু লাগবে না। এই বুড়া বাবাকে আর কষ্ট দিবা না। প্রতিদিন খাওয়াদাওয়া করবা ঠিকমতো।" আমার চোখে পানি চলে এলো। এই লোকটার মনে আমার জন্য এত ভালোবাসা ছিলো আমি কোনোদিন বুঝতেও পারিনি। উনার কপালে চুমু দিয়ে কথা দিলাম আর কখনো কষ্ট দিবো না, যা বলবে তা-ই শুনব। উনার স্নেহ দেখে মনে হচ্ছিলো আমি ছোট্ট একটা মেয়ে আর উনি আমার পর্বতসম বাবা, আপন বাবা। একদমই অস্বস্তি লাগেনি। ভীষণ ভালো লেগেছিলো। সবাইকে বলে বেড়ালাম আমার শ্বশুর আমাকে কত্ত ভালোবাসে।

"গ"
গত সপ্তাহের কথা। সকালে প্রতিদিনের মতো আমার ঘুম ভাঙাতে শ্বশুর-শাশুড়ি আমার দরজায় ধাক্কা দিচ্ছিলেন। আমি চমকে উঠে দরজা ফাঁক করে দেখি শ্বশুর দাঁড়ানো। জিজ্ঞেস করলান অফিসে কখন যাবো। উত্তর দিলাম। তারপর আরো এটাসেটা বললেন। এক পর্যায়ে আমি হেসে বললাম, "বাবা, এত জোরে দরজায় ধাক্কা দিয়েন না তো। আমি চমকে উঠে ভয় পাইসি। এখনো বুক ধড়ফড় করতেসে।"
"আহারে, মা! তোমাকে ভয় দেখাইসি। সরি, মা!" বলতে বলতে আমার ফাঁক করা দরজা দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে পড়লেন। আমি একটা নাইট গাউন পরে ছিলাম। ঘুমের মধ্যে গাউনের ফিতা খুলে গিয়ে গাউন আলগা হয়ে ছিলো। আমার ঘরে সচরাচর কেউ ঢোকে না। টুকিটাকি কথাবার্তা দরজার ফাঁক দিয়েই সারা হয়। তাই ওড়না না পরেই দরজা খুলেছিলাম। উনি ঢুকেই দরজা বন্ধ করে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।
"মা, তুমি আমার মেয়ে তো। ছেলের বউ না। তোমাকে কত আদর করি। আমি তো তোমার বাবা, তাই না? বলো তো আমি তোমার কে?"
হেসে বললাম, "বাবা"
"কার বাবা?"
"আমার বাবা"
"তুমি আমার সোনা মেয়ে, আমার লক্ষ্মী মেয়ে।"
বলতে বলতে আমাকে জড়িয়ে ধরে তুলে ফেললেন উনি। আমি উনার পাগলামি দেখে হাসছিলাম খুব। বলছিলাম, "বাবা, আপনি একটা পাগল!"
জিজ্ঞেস করলেন, "মা, খেয়ে যাবা তো?"
আমি বললাম, "হ্যাঁ, আপনি যান। আমি রেডি হয়ে আসছি।"
"ঠিক আছে, মা। আমি যে কত খুশি হইসি তোমার প্রতি! আমি তোমাকে এখন আবার একদম ঘুম পারায়ে দিয়ে যাবো। আমার মাকে আমি ঘুম পাড়ায়ে দিবো।"
বলতে বলতে আমাকে একদম পাঁজাকোলা করে তুলে নিলেন। আমি তখনো হাসছি উনার ছেলেমানুষি দেখে। আমাকে কোলে করে বিছানায় শুইয়ে দিলেন। তারপর পাশে বসে সোজা আমার বুকে হাত রাখলেন। বললেন, "মা, আমার মেয়ে নাই। তুমিই আমার মেয়ে। তোমাকে আমি যখন ইচ্ছা অনেক আদর করব। তুমিও তোমার এই বুড়া বাবাটাকে আদর করে দিবা, ঠিক আছে?" আমি প্রচণ্ড অস্বস্তি নিয়ে তার হাত প্রায় টেনে সরিয়ে নিলাম বুকের ওপর থেকে। বললাম, "জ্বি, বাবা। আপনি এখন যান। আমি রেডি হবো।"
সাথে সাথে উনি সরাসরি আমার ডান স্তনের ওপর হাত রাখলেন। আরো কী কী জানি বলছিলেন। আমার কান দিয়ে আর কিছু ঢুকছিলো না। শুধু মনে আছে আমি বারবার মাথা নাড়ছি, "হ্যাঁ বাবা, জ্বি বাবা" বলছি, বুক আর শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে তার হাত সরিয়ে দিচ্ছি বারবার। তার এক হাত আমার মাথায়, আরেক হাত যখন যেখানে ইচ্ছা রাখছে আর কথা বলছে। আমি কী কী জানি বলছিলাম। এক পর্যায়ে আমাকে আবার টেনে বিছানায় বসিয়ে জড়িয়ে ধরলেন। তার জড়াজড়িতে আমার গাউনের এক অংশ সরে গিয়ে ডান ঊরু উন্মুক্ত হয়ে পড়ল। আমি কাপড় টেনে আনতে চেষ্টা করলে উনি বাধা দিলেন। আমি জোর করে উনাকে সরিয়ে দিয়ে পাশে পড়ে থাকা কাঁথাটা গায়ে পুরোপুরি জড়িয়ে নিয়ে কুঁকড়ে গেলাম। উনি বোধ হয় ততক্ষণে বুঝে গেছেন যে এর বেশি আগানো যাবে না। পুরোটা ঘটল ৩০-৪০ সেকেন্ডের মধ্যে। ততক্ষণে উনি ৩-৪ বার আমার স্তনে হাত দিয়েছেন। একবার হালকা চাপ দিয়েছেন। উনি যখন চলে যাচ্ছিলেন তখন টের পেলাম আমার বুকের কাপড় সরে গিয়ে প্রায় নগ্ন আমি। বুকের দিকে না তাকিয়েই কাপড়টা টেনে নিলাম। দরজা বন্ধ করে লক করে দিলাম।

"ঘ"
দরজা বন্ধ করে স্তব্ধ হয়ে ছিলাম কিছুক্ষণ। এটা কী হলো? আমার অবচেতন মনে চাপা পড়ে থাকা শৈশবের সেই স্মৃতি এবার জলজ্যান্ত হয়ে আমার ভেতরটা নাড়িয়ে তুলল। ক্লাস সেভেনের সেই ঘটনা মনে করে হাউমাউ করে কাঁদলে লাগলাম আমি। একটু আগে যা হয়ে গেল সেটাই বরং অনেক দূরের কোনো ঘটনা মনে হচ্ছিলো। কাঁপতে কাঁপতে কোনোমতে গোসল করে ছুটে বের হলাম বাসা থেকে। পুরোটা পথ শুধু নিজেকে প্রবোধ দিয়ে গেলাম- আসলে কিছুই হয়নি। ছোটবেলার সেই ঘটনা আর আমার অনভ্যস্ততার কারণেই উনার বাবাসুলভ স্নেহের বাড়াবাড়ি নিয়ে এমনটা লাগছে আমার। নিজেকে বুঝাচ্ছিলাম আর কাঁদছিলাম। যত যা-ই বোঝাই নিজেকে, মন তো মানে না। বুকে কেন হাত দেবে? হাত বারবার সরিয়ে দেওয়ার পরেও? এটুকু বোধ কেন থাকবে না উনার? মেয়ে নেই বলে কি মেয়েকে আদর করার সীমাটুকুও জানবে না? নাকি পুরোটাই ইচ্ছাকৃত? তাকে যতটুকু চিনেছি, তাতে সেটা বিশ্বাস করা কষ্টকর। কিছুতেই মেলাতে পারছিলাম না। অফিসের কাজে ভুল করছিলাম আর ঝাড়ি খাচ্ছিলাম। একটু পরপর ওয়াশরুমে গিয়ে কাঁদছিলাম। হঠাৎ মনে হলো উনি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে না করে থাকেন, উনি কি আমার হাজবেন্ড বা শাশুড়ির সামনে ওই আচরণ করতে পারবেন? উত্তর হলো- "না"।
এবার আমি পুরোপুরি ভেঙে পড়লাম। আমার হাজবেন্ড তখন ঢাকায় নেই। তার ফোনও নষ্ট কদিন ধরে। ওর সাথে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। আর ওকে বলবই না কীভাবে?
সারাদিন নিজের সাথে লড়ে সন্ধ্যায় বাসায় ফোন করে জেনে নিলাম শাশুড়ি বাসায় কি না। তারপর ঘরে ঢুকলাম। ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দিলাম। কীভাবে দুই ঘণ্টা কেটে গেল জানি না। হাজবেন্ডের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। এর মধ্যে শাশুড়ি এসে আমার খো৬জ নেওয়ার চেষ্টা করলেন। আমি ভীষণ খারাপ ব্যবহার করে তাড়িয়ে দিলাম তাকে। তারপর শ্বশুর-শাশুড়ি মিলে আমাকে শান্ত করতে এলেন।
"মা, কী হইসে আমাদের বলো। তুমি না বললে আমরা কীভাবে বুঝব?"
শ্বশুর এত ভদ্রভাবে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন যে আমি সব ভুলে গেলাম। মনে হলো আসলে কিছুই হয়নি। ছোটবেলার অভজ্ঞতার কারণেই আমার মানসিক সমস্যা থেকে এই খারাপ লাগা। বুড়ো মানুষ। না বুঝে সীমা লংঘন করেছে। আমি সাথে সাথে শান্ত হয়ে গেলাম। উনাদের বললাম যে তেমন কিছু না, হাজবেন্ডের সাথে ঝগড়া। শ্বশুর আমাকে মিষ্টি কাহিয়ে দিলেন। "মেয়েটা মন খারাপ করে না খেয়ে বসে আছে কখন থেকে!"
ততক্ষণে আমি নিজেকে পুরোপুরি বুঝিয়ে ফেলেছি যে শ্বশুর নির্দোষ। আমারই মানসিক সমস্যা।

কিছুক্ষণ পর শাশুড়ি রান্না করতে চলে গেলেন। আমি শ্বশুর-শাশুড়ির রুমে। শ্বশুর আমাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন।
"মা, আমার ছেলে যদি তোমাকে কষ্ট দেয় তো দরকার হলে ওকে আমি ত্যাজ্য ঘোষণা করব। তবু তোমার কোনো কষ্ট হতে দেবো না। তোমার মতো মেয়ে পেয়েছে সেটা যে ওর কত বড় ভাগ্য ও কী জানে?"
আমি হাসলাম। মন একদম ভালো হয়ে গেল।
একটু পর উনি বললেন, "চলো, মা। তোমার রুমে গিয়ে গল্প করি।"
শোনামাত্র আমি কাঠ হয়ে গেলাম। বুঝলাম কেন অন্য রুমে যেতে বলছে। কারণ তার রুমের দরজা এখন সবার সামনে বন্ধ করা সম্ভব না। আর রুম থেকে ডাইনিং দেখা যাচ্ছিলো যেখানে একজন গেস্ট খাচ্ছিলো। আমি বললাম, "বাবা, এখানেই গল্প করি।"
উনি বললেন, "না, তোমার রুমে চলো।"
বলে উনি উঠে গেলেন।
আমার মাথায় তখন ভাবনা এলো- এটা কি আসলেই আমার মানসিক সমস্যা বা সন্দেহবাতিক? আমাকে জানতে হবে। নিজের রুমে ঢোকার সময় ইচ্ছে করে দরজাটা পুরোপুরি খুলে নিচের ম্যাগনেটের সাথে আটকে দিলাম যাতে উনি "accidentally" দরজা বন্ধ করতে না পারেন। দরজা বন্ধ করতে হলে উনাকে টান দিয়ে ম্যাগনেট থেকে দরজাটা ছোটাতে হবে। লাইট জ্বালিয়ে বিছানায় গিয়ে চুপচাপ বসলাম। উনি পাশে এসে বসলেন। দুতিন মিনিট পর কী অজুহাতে যেন ডাইনিংয়ে গেলেন। আবার রুমে ঢোকার সময় টান দিয়ে দরজা বন্ধ করে এবার লক করে দিলেন। আমি জানি সে খুব বেশি কিছু করতে পারবে না। কারণ বাসাভর্তি লোকজন। কিন্তু আমার নিজের সংশয় দূর করা দরকার। তাই ঠাণ্ডা মাথায় বসে থাকলাম। উনি দরজা বন্ধ করে এসে পাশে বসলেন আবার। কাঁধে-পিঠে হাত বুলিয়ে আদর করতে করতে অনেক "আদরের" কথা বলতে লাগলেন।
আমার কান দিয়ে ধোঁয়া বেরুচ্ছিলো যেন। সব কথা মনেও নেই। যে কয়টা কথা মনে আছে সেগুলো হলো-

"আমার তোমাকে যখন ইচ্ছা যেভাবে ইচ্ছা আদর করতে ইচ্ছা করলে আদর করতে দিবা তো?"
"তোমাকে যদি আমার ছেলে কষ্ট দেয়, আদর করতে না পারে তো আমার কাছে আসবা। আমি আছি কীজন্য? তোমার যত ধরনের আদর দরকার আমি সব দিবো।"
"এই যে তোমাকে এত আদর করি, তোমার শাশুড়ি দেখলে কী বলবে? বলবে যে এটা বাড়াবাড়ি। সে মাইন্ড করবে। তাই আমি কী করসি? আমি দরজা বন্ধ করে লক করে দিসি। বুঝতে পারসো?"
"আমার কিন্তু তোমাকে মাঝেমধ্যেই আদর করতে ইচ্ছা করবে। আমাকে আদর করতে দিবা তো? অনুমতি দিলা তো? আমাকে ছুঁয়ে প্রমিজ করো আদর করতে দিবা!"

পুরোটা সময় মুখে হাসি ধরে রেখে "হ্যাঁ বাবা, জ্বি বাবা" করে গেছি। শুধুমাত্র কী ঘটছে বুঝতে। আমার যা জানার তা আমি জেনে গেছি ততক্ষণে।

এরপর আমি কোন অজুহাতে ঘর থেকে বের হয়ে গেছিলাম মনে নেই। শুধু মনে আছে আমি রুমে ঢোকামাত্র আবারো রুমে ঢুকে দরজা লক করে দেয়। আমি সাথে সাথে এক ফ্রেন্ডকে ফোন দিয়ে কথা বলতে থাকি যাতে সে আবার গল্প করার অজুহাতে আমার গায়ে হাত না দেয়। এর মধ্যে আমার হাজবেন্ড ফিরে এলো। আমি তখনো আর কাউকে কিছু বলিনি। আমার শ্বশুরের যে ইমেজ তাতে আমার কথা হয়ত কেউ বিশ্বাস করবে না। পাগল ভাববে। আমার বাবা-মাও বিশ্বাস করবে কি না জানি না। কারণ আমার শ্বশুর-শাশুড়ির অনেক স্নেহ সত্ত্বেও তাদেরকে ভালোবাসা দূরের কথা, তাদের কখনো পছন্দও করতে পারিনি- এটা আমার কথায়, আচরণে বোঝা যায়। তাদের সাগরসমান ভালোবাসা উপেক্ষা করে নিজের খেয়ালখুশিমতো চলি। তাই আমিই খারাপ। তাই কাউকে কিছু না বলে সারারাত কাঁদলাম। হাজবেন্ড বারবার জিজ্ঞেস করলো। কিছু বললাম না। পরদিন সকালে এক কাপড়ে নিজের বাসায় চলে এলাম। এরপর তিনজন কাছের বন্ধুর কাছে সব খুলে বললাম।

আমি আমার হাজবেন্ডকে অনেক ভালোবাসি। প্রথমে তার প্রতিও ঘৃণা হচ্ছিলো ওই লোকের সন্তান হিসেবে। কিন্তু আমি জানি আমি তাকে অনেক ভালোবাসি। আর এও জানি যে সে তার পরিবারকে অন্ধের মতো ভালোবাসে। তাকে তার পরিবার থেকে সরিয়ে আনতে চাইলে সে হয়ত আমার থেকে সরে যাবে- এমন নানান কথা ভেবে হাজবেন্ডকে কিছু জানাইনি। পরে কিছু শুভাকাঙ্ক্ষীর পরামর্শে সিদ্ধান্ত নেই যে, না, আমাকে বলতে হবে। তাকে হারানোর ঝুঁকি নিয়েও সব খুলে বললাম। আমার সব আশংকা ভুল প্রমাণ করে সে আমাকে শুধু বিশ্বাসই করল না, সম্পূর্ণ সমর্থন দিলোশ্বশুরবাড়ি থেকে কাপড়চোপড় আর সবকিছু নিয়ে বাবার বাড়ি চলে এলাম। এখানেই থাকব আপাতত। পরের কথা পরে দেখা যাবে।

No comments: